এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভারতীয় ট্রাক ব্যবহার করে বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য কৌশলে দেশে নিয়ে আসছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বেনাপোলের বেশ কিছু চিহ্নিত ট্রাক চালক প্রতিদিন অবৈধভাবে রপ্তানি বোঝাই পণ্য নিয়ে ভারতে যায়। ফেরার পথে ভারতের বনগাঁ ও কোলকাতার ট্রাক চালকদের সাথে চুক্তি করে বাংলাদেশি চালকরা ভারতীয় ওষুধ, প্রসাধনী, মাদকদ্রব্য, পোশাক, শাড়ি, থ্রিপিস, খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতীয় ট্রাকে লুকিয়ে রেখে বহন করে বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসছে।
মাঝে মধ্যে আমদানি করা বৈধ মালের সাথে এসব মালামালও আনা হচ্ছে। কখনও বন্দরের ট্রাক টার্মিনাল থেকে আবার কখনও বন্দরের অভ্যন্তর থেকে চোরাচালান হওয়া এসব পণ্য বাইরে বের করে দেয়া হচ্ছে। বৈধ আমদানি করা পণ্যের সাথে আনা এসব চোরাচালান পণ্য বহনের কারণে বড় ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে দেশের নামিদামি আমদানিকারকরা। ফলে ভয়াবহ আতঙ্ক বিরাজ করছে আমদানিকারকদের মাঝে।
গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় কাই গ্রুপের ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যালটেক অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড ভারত থেকে ১২ টন ৯০৮ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ইনগড আমদানি করেন। যার বি/ই নাম্বার সি-৫৩০/৭৮। পণ্য চালানটি কায়িক পরীক্ষা করে ৪৮ লাখ টাকার রাজস্ব পরিশোধ করে বন্দর থেকে ১৪টি ট্রাকে করে খালাস নেয়ার সময় বন্দরের অভ্যন্তরে থাকা চোরাচালান সিন্ডিকেট সদস্য শাহীন হাওলাদার ১৩ বান্ডেল ইনগড বোঝাই ঢাকা মেট্রো-ট ১৬-৮১৬৩ নম্বরের ট্রাক ড্রাইভার লালন মিয়ার সাথে ভাড়া চুক্তি করে ১৪ বেল কাপড় লোড দেয়।
ড্রাইভার লালন মিয়া মালের কাগজপত্র চাইলে বলা হয় আধাঘণ্টা পরে দেয়া হবে। এরইমধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থলে এসে মালের কাগজপত্র চাইলে লালন মিয়া শাহীনকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। ততক্ষণে পালিয়ে যায় শাহীন। কাস্টমস বৈধ পণ্যের মধ্যে অবৈধপণ্য পাওয়ায় সব পণ্য আটক করে। আমদানিকারক বছরে ৩০০ কোটি টাকার ভ্যাট প্রদান করেন সরকারকে। অথচ চোরাচালান সিন্ডিকেটের কারণে আজ আমদানিকারককে বড় ধরনের হয়রানির শিকার হতে হলো।
অন্যদিকে, গত ১৮ নভেম্বর ভারত থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত আমদানিকারক বিআরবি ক্যাবল লিমিটেড, পিডি লাইফ লিমিটেড ও পাওয়ারম্যান বাংলাদেশ লিমিটেডের ৬টি চালান নিয়ে ডাব্লিউ বি-২৩বি ১২৪৫ নাম্বারের একটি ভারতীয় ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করে। পাঁচটি পণ্যচালান বন্দরের ৯ নম্বর শেডে আনলোডের পর পাওয়ারম্যান বাংলাদেশ লিমিটেডের পাঁচটি ইনট্যাক কাঠেরপেডি চালানটি বন্দরের ৪০ নম্বর শেডে আনলোডের জন্য যাওয়ার সময় বন্দরের সামনের সড়ক থেকে বিজিবি ভারতীয় ট্রাকটি আটক করে। পরে ট্রাকের কেবিন তল্লাশি করে বাজারের ব্যাগে রক্ষিত ক্রিম, চকলেট, মদ, জিরা, কিসমিসসহ ট্রাকটি জব্দ করে বিজিবি ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। যার ওজন ১৫ কেজি। তল্লাশির সময় ট্রাক ড্রাইভারকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে যৌথ টিমের সদস্যরা।
বৈধ রুটে বৈধ পণ্যের সাথে আসা চালাটির পাঁচটি কাঠের পেডি খুলে তল্লাশি করে কোনো অবৈধ পণ্য পাওয়া যায়নি। অথচ আমদানিকারকের চালানটি আটক করা হয়। আমদানিকারক এখনও পর্যন্ত কোনো সিএন্ডএফ এজেন্ট নিয়োগ দেয়নি পণ্য চালান খালাশের জন্য। এ ধরনের চোরাচালান সিন্ডিকেটের কারণে বৈধ আমদানিকারকরা প্রতিনিয়তই নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ফলে অনেক আমদানিকারকই বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য আমদানি না করে চট্টগ্রামে চলে গেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে জরুরি ভিওিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।
ভারত বাংলাদেশ চেস্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, চোরাচালান সিন্ডিকেটের কারণে বৈধ রুটে আমদানি করা ট্রাকে ড্রাইভারের কেবিনের ভেতর থাকা চোরাচালান পণ্য বহনের কারণে কেন বৈধ পণ্য আটক হবে। কেনই বা নামিদামি আমদানিকারকরা হয়রানির শিকার হবে, আমরা এর প্রতিকার চাই। বন্দরের ভেতর প্রতিটি শেডে অবৈধ বহিরাগত লোকজন আছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যালটেক অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান ট্রিম ট্রেডের মালিক জিয়া উদ্দিন বলেন, বন্দর একটি বৈধ বন্ডেড এরিয়া এখানে কিভাবে চোরাচালান সিন্ডিকেট গড়ে উঠলো, আর সরকারকে ৪৮ লাখ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করে কেনই বা আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। জরুরি ভিওিতে বন্দরের অভ্যন্তরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আনঅথরাইজড লোকজনকে আটক করতে হবে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, বন্দরে চোরাচালান সিন্ডিকেটের কারণে বৈধ আমদানিকারকরা প্রতিনিয়তই নানানভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে জরুরি একটি কমিটি করে তদন্ত করা হবে। কাস্টমসের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।