জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আফগানিস্তানের গম উৎপাদনস্থল উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আটটি প্রদেশে মরোক্কান পঙ্গপালের ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে একটি সতর্কতা জারি করেছে। আফগানিস্তানের বৃহত্তম অনলাইন সংবাদ পরিষেবা খামা প্রেস-এর বরাতে শুক্রবার ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআই এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বাদাখশান, বাদঘিস, বাঘলান, বলখ, কুন্দুজ, সামাঙ্গন, সার-ই-পুল ও তাখার ছাড়াও আফগানিস্তানের হেরাত ও ঘোর প্রদেশে পঙ্গপালের উপস্থিতির খবর পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষণ অনুসারে, তালেবানের কট্টরপন্থী শাসনের অধীনে দেশটি এমনিতেই গুরুতর মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। তবে ২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটের সম্মুখীন হবে আফগানিস্তান এবং পূর্বোক্ত জেলাগুলোতে ব্যাপক মরক্কোর পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব বিষয়টিকে আরও খারাপ করে তুলবে।
খামা প্রেসের মতে, আফগানিস্তানে এফএও প্রতিনিধি রিচার্ড ট্রেঞ্চার্ড বলেছেন যে ‘আফগানিস্তানের গমের ঝুড়িতে মরক্কোর পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব প্রবল উদ্বেগের বিষয়। মরক্কোর পঙ্গপাল গাছের ফসল, চারণভূমি এবং ৫০টি খাদ্যশস্য সহ ১৫০টিরও বেশি প্রজাতির গাছপালা খেয়ে ফেলে, যার সবকটিই আফগানিস্তানে জন্মায়। এটি কৃষক, সাধারণ মানুষ ও সমগ্র দেশের জন্য একটি বিশাল হুমকি।’
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা বন্ধে বিশ্ব নীরব: প্রধানমন্ত্রী
মরক্কোর পঙ্গপাল বিশ্বের সবচেয়ে খাদক উদ্ভিদ কীটগুলোর মধ্যে একটি।
এফএও’র মতে, এই বছরের সম্পূর্ণ মহামারি থেকে ৭০ লাখ থেকে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন টন গমের ক্ষতি হতে পারে, যার ফলে অর্থনৈতিক বিশাল ধাক্কা আসতে পারে।
খামা প্রেসের মতে ট্রেনচার্ড আরও বলেন, ‘২০ ও ৪০ বছর আগে গত দুটি বড় প্রাদুর্ভাবে আফগানিস্তানের মোট বার্ষিক গম উৎপাদনের আনুমানিক ৮ এবং ২৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গত তিন বছরের তুলনায় এই বছর ফসলের পূর্বাভাস সবচেয়ে ভাল, কিন্তু এই প্রাদুর্ভাব ধ্বংসের হুমকি স্বরূপ। এই প্রাদূর্ভাব চলতি বছরের শেষের দিকে এবং পরের বছরে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলবে।’
২০২১ সালের আগস্টের মাঝামাঝি তালেবানরা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
আফগানিস্তান বর্তমানে একটি গুরুতর মানবিক সংকটের মধ্যে পড়েছে।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে জ্বালানি ট্যাঙ্কার টানেলে বিস্ফোরণ, নিহত ১৯
কারণ আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন অনুসারে, দেশটিতে এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ জরুরি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
এছাড়াও, ইউক্রেন সংকট খাদ্য খরচ বৃদ্ধির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এবং তা অনেক আফগানের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তালেবান নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দেশটিতে যে নৃশংসতা চালিয়েছে তাতে আফগান নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে।
কয়েক দশক ধরে সংঘাত চলা আফগানিস্তান; খাদ্য ঘাটতিসহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। কারণ বিদেশি সরকারগুলো উন্নয়ন তহবিল বন্ধ করে দিচ্ছে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। যার বেশিরভাগই নারীদের ওপর তালেবানের বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপের কারণে দেওয়া হচ্ছে।
২০২১ সালের আগস্টে দেশ থেকে মার্কিন সেনাদের প্রস্থানের পর যেহেতু তালেবানরা ক্ষমতায় ফিরে এসেছে, তাই নারীদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জিমে বা পাবলিক স্পেসে কাজ করার অনুমতি নেই।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে মর্টার বিস্ফোরণে নিহত ৪, নিখোঁজ ২০