ইউরোপকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বার্থরক্ষায় সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস। এ সময় ইউরোপের নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের ওপরও গুরুত্ব দিন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই বক্তব্য দেন মিতসোতাকিস।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ) গ্রিসের থেসলানোকির একটি বাণিজ্যিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন মিতসোতাকিস।
সম্প্রতি ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে বাদ দিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়; বিতর্কিত মন্তব্যও করে যাচ্ছেন অনবরত। ইউক্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে ঝুঁকছেন রাশিয়ার দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এহেন কর্মকান্ড খোদ দেশটিরই বহুদিনের পররাষ্ট্রনীতির বড়সড় পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করছে। চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ইউরোপের নেতারাও।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-জেলেনস্কি দ্বন্দ্বে
মঙ্গলবারে সৌদি আরবে রুশ-মার্কিন বৈঠক নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা তখন ট্রাম্প ও জেলেনস্কির দ্বন্দ্ব ইউরোপের নেতাদের চিন্তা আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প ‘রাশিয়ার বিভ্রান্তিকর তথ্যের ফাঁদে’ পড়েছেন। কিয়েভকে ছাড়া করা বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার কথাও সুস্পষ্ট করে জানান দেন তিনি।
তার বক্তব্যের জবাবে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে দ্রুতই আলোচনার টেবিলে বসতে জেলেনস্কিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এ সময় জেলেনস্কিকে ‘অনির্বাচিত স্বৈরশাসক’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
দুই নেতার এই দ্বন্দ্ব ইউরোপীয়দের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ইউরোপে যে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, দ্রুতই তা কাটিয়ে উঠতে উদ্যোগ নিতে হবে তাদের।
এ সময় মিতসোতাকিস বলেন, ইউরোপের নিজস্ব একটি সেনাবাহিনী প্রস্তুত করার দাবি বেশ পুরনো। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে; তা ইউরোপের সেনাবাহিনী গঠনের যে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
এর আগে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও ইউরোপের নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই কী ইউক্রেন জয়ের পথে রাশিয়া?
মূলত, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর উপরই নির্ভরশীল ইউরোপের দেশগুলো। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রমাগত ইউরোপকে প্রতিরক্ষায় বেশি বিনিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প ।
শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইউরোপকে অবশ্যই আরও বেশি সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলোর নতুন করে নিজেদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বৈশ্বিক কূটনৈতিকবৃন্দ।