পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের লাহোরের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এসময় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ইমরান খানের ৬১ জন সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার দেশটির পুলিশ কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিনিয়র পুলিশ অফিসার সুহেল সুখেরা ইমরান খানের বাড়িতে অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
পুলিশ অফিসার সুহেল সুখেরা অবশ্য বলেছেন, পুলিশ ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির সদস্যদের এবং তার বিরোধীদের নির্মিত একটি ব্যারিকেড অপসারণের কাজ করেছে।
তিনি বলেন, তারা কংক্রিটের ব্লক, কাটা গাছ, তাঁবু এবং একটি ট্রাক পার্ক করে ইমরান খানের বাড়ির চারপাশের রাস্তাগুলো অবরোধ করে রেখেছিল।
এ অভিযানের সময় ইমরান খান বাড়িতে ছিলেন না।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশ থেকে পাওয়া উপহার বিক্রি এবং তার সম্পদ গোপন করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার শুনানিতে অংশ নিতে তিনি ইসলামাবাদে গিয়েছিলেন। বিচারক এই মামলার শুনানি ৩০ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করেন।
আরও পড়ুন: শাহরুখ ও সালমানের চেয়ে অনেক ভালো অভিনেতা ইমরান খান: পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ
সুখেরা বলেন, ইমরান খানের সমর্থকরা লাঠি হাতে পাথর ও মলোটভ ককটেল নিক্ষেপ করে পুলিশকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে এবং খানের বাড়ির ছাদে থাকা এক ব্যক্তি গুলি চালায়। এতে অন্তত তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
সুখেরা আরও বলেন, খানের বাসভবনের প্রধান দরজা ভেঙ্গে তারা পুলিশের ওপর হামলায় ব্যবহৃত অটোমেটেড অস্ত্র, মোলোটভ ককটেল, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা খুঁজে পেয়েছে।
সুখেরা জানান যে বিশাল বাসভবনের ভেতরে, পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেয়ার জন্য অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল। যারা কয়েক ডজন পুলিশ অফিসারকে আহত করেছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, পুলিশ খানের বাড়িতে অনুসন্ধান করে বাঙ্কার খুঁজে পেয়েছে, যেখানে আরও অনেক অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখা আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে খানের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছিল এবং তাদের তাড়া করে জামান পার্কের আশেপাশের বেশ কয়েকটি বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যায়।
অন্যদিকে, শনিবার ইমরান খান ও তার আইনজীবী ইসলামাবাদের একটি আদালতে হাজির হন। কারণ একদিন আগেই দেশটির শীর্ষ আদালত খানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করে, তাকে ইসলামাবাদে চলাফেরা করার সুযোগ দেয় এবং তাকে আটক না করেই দুর্নীতি মামলা পরিচালনার নির্দেশ দেন।
মামলার আগের দুই শুনানিতেই হাজির না হওয়ায় ১৩ মার্চ দ্বিতীয়বার আদালত তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। এরপর থেকে খান লাহোরে তার বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের হাত থেকে রক্ষা করতে তার সমর্থকরা ঢিল ছুঁড়েছে এবং লাঠিচার্জকারী পুলিশের সঙ্গে টানা দুই দিন ধরে সংঘর্ষ করেছে।
শনিবার খানের গাড়িবহর ইসলামাবাদের জেলা আদালতের জুডিশিয়াল কমপ্লেক্সের কাছে পৌঁছালে পুলিশ তাদের কমপ্লেক্সে ঢুকতে বাধা দেয়। এরপরই তার সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে সরকারবিরোধী সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গুলিবিদ্ধ
বিক্ষুব্ধ খান সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়ে মারে এবং পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদানে গ্যাসের ক্যানিস্টার ছোঁড়ে।
সানাউল্লাহ বলেন, খানের অনেক সমর্থক সশস্ত্র ছিল।
খানের অ্যাটর্নি বাবর আওয়ান বিশেষ পরিস্থিতিতে ইমরান খানের আদালতে উপস্থিতি থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেছিলেন।
শনিবার বিচারিক কমপ্লেক্সের গেটে উপস্থিত হওয়া সত্ত্বেও পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ না করা এবং আদালতে হাজির না হওয়ার জন্য খানের নিন্দা করেছেন আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার।
তিনি অভিযোগ এড়াতে খানকে তার বিক্ষুব্ধ সমর্থকদের ব্যবহার করার অভিযোগ করেন।
তারার মতে, খানের সমর্থকরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার সময় বিচারিক কমপ্লেক্সের বাইরে দুটি পুলিশের গাড়ি এবং বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ইমরান খান ইসলামাবাদে যাওয়ার সময় একটি ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন যে পুলিশ লাহোরে তার বাসভবনে ভাঙচুর করেছে, যখন তার স্ত্রী বাড়িতে একা ছিলেন।
তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান।
খানের পিটিআই পার্টির সেক্রেটারি-জেনারেল আসাদ উমর পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি চিঠিতে বলেছেন, পুলিশ ইমরান খানের লাহোরের বাড়িতে অভিযানের জন্য তার ইসলামাবাদ যাওয়ার অপেক্ষা করেছিল।
তিনি বলেন, ‘দরজা ও দেয়াল গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে’ এবং বাড়ির ৪০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত এপ্রিলে সংসদে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা ইমরান খান।
তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশ থেকে পাওয়া উপহার বিক্রি এবং সম্পদ গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: ইমরান খানকে অযোগ্য ঘোষণা করল পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন
প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা থেকে ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে, এটি তার মধ্যে একটি।
৭০ বছর বয়সী ইমরান খান পার্লামেন্টে আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি দাবি করেছেন যে তার ক্ষমতা থেকে অপসারণ তার উত্তরসূরি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল।
যদিও ওয়াশিংটন ও শাহবাজ শরীফের সরকার উভয়েই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।