মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডের একদিন পর শুক্রবার ভারতের পার্লামেন্ট সিনিয়র বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর লোকসভার সাংসদ পদ খারিজ করেছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্নকক্ষকে ইঙ্গিত করে সংসদের একটি নোটিশে বলা হয়েছে যে রাহুল গান্ধীর ‘লোকসভার সদস্যপদ খারিজ করা হলো’।
২০১৯ সালের নির্বাচনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপাধি সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের জন্য আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
রাহুল গান্ধী দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার ওয়েনাড়ের সাংসদ ছিলেন।
তিনি বর্তমানে ৩০ দিনের জন্য জামিনে রয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
রাহুল গান্ধীর দল কংগ্রেস এই রায়কে ‘ভুল এবং পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে অভিহিত করেছে।
দলের সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, দল ‘আইনগত ও রাজনৈতিক উভয়ভাবেই’ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
শুক্রবার রাজধানী দিল্লিতে বিক্ষোভ মিছিলে বিরোধী নেতাদের নেতৃত্ব দেয় কংগ্রেস।
প্রতিবাদী সাংসদরা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রপতি ভবনে মিছিল করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খারগে গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাহুল গান্ধী শুক্রবার সংসদে কথা বলার অনুমতি চেয়েছিলেন, কিন্তু তা প্রত্যাখান করা হয়।
আরও পড়ুন: মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীর ২ বছরের কারাদণ্ড
তিনি অভিযোগ করেছেন, রাহুলের বিরুদ্ধে এই রায় মূলত আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবির ফলাফল।
এই বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শর্ট-বিক্রেতা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রকাশিত প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও আদানি গ্রুপ আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, ‘যারা সত্য কথা বলছে তারা (সরকার) তাদের রাখতে চায় না, তবে আমরা সত্য কথা বলতে থাকব।’
কংগ্রেস বলছে আগামী দিনে তারা সরকারের বিরুদ্ধে আরও বড় পরিসরে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে।
২০১৯ সালে একটি নির্বাচনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপাধি সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে রাহুল গান্ধীকে।
২০১৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশে বলা হয়েছে যে একজন আইনপ্রণেতা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বা তার বেশি বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে অবিলম্বে সংসদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
সাজা স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত বা মামলায় খালাস না পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে লড়তে পারবেন না রাহুল গান্ধী।
আগামী বছর ভারতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা।
কংগ্রেস পার্টি বলেছে, সরকারের ‘অন্যায়’ প্রকাশ করার জন্য টার্গেট করা হচ্ছে রাহুলকে।
মি. রমেশ গুজরাটের আদালতের রায়কে ‘খুবই গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যা’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন এই রায় ‘আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত’কে প্রভাবিত করতে পারে।
বৃহস্পতিবার একটি দলীয় বৈঠকের পরে তিনি বলেন, ‘এটি মোদী সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি, হুমকির রাজনীতি, ভয় দেখানোর রাজনীতি এবং হয়রানির রাজনীতির একটি বড় উদাহরণ’।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মন্ত্রীরা অবশ্য রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য রাহুল গান্ধী ও তার দলের সমালোচনা করেছেন।
কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব বলেছেন, রাহুল গান্ধী আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস (ওবিসি) নামে পরিচিত গোষ্ঠীর সদস্যদের অপমান করেছিলেন, যার অধীনে ‘মোদি’ নামটি পড়ে।
তিনি বলেন, ‘কোনও পদবীকে অপমান করা বাক স্বাধীনতা নয়।’
গত বছর কংগ্রেস দল ছাড়া ভারতের প্রাক্তন আইনমন্ত্রী কপিল সিবাল আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘উদ্ভট’ বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, রাহুল গান্ধীর মন্তব্য ‘একজন ব্যক্তিকে’ লক্ষ্য করে, কোনও গোষ্ঠীকে নয়।
বৃহস্পতিবারের রায়ের প্রতিক্রিয়ায়, রাহুল গান্ধী মহাত্মা গান্ধীর একটি উদ্ধৃতি টুইট করেছেন, ‘আমার ধর্ম সত্য ও অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত। সত্য আমার ঈশ্বর, অহিংসা তা পাওয়ার মাধ্যম।’
বেশ কয়েকটি বিরোধী দল রাহুল গান্ধীর সমর্থনে নেমেছে।
শুক্রবার কংগ্রেসসহ ১৪টি দল সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল।
তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপির বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলোর অপব্যবহার করছে।