কিন্তু এ হিমালয়ান অঞ্চলটির ৭০ লাখ বাসিন্দার জন্য বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। তারা শুধুমাত্র সরকার অনুমোদিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারছেন। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টুইটারের মতো জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমগুলো এখনও বন্ধ রয়েছে। আর ইউটিউব ও নেটফ্লিক্সে প্রবেশ করা গেলেও ইন্টারনেট সেবা এত ধীর গতির যে ভিডিও দেখা যায় না।
কিছু কাশ্মীরি নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিতে ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করছেন। বাধা-নিষেধ থাকা ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশের জন্য বিশ্বব্যাপী এ ব্যবস্থাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থাটিকেও দমন করার উপায় খুঁজছে।
নয়াদিল্লি ভিত্তিক ডিজিটাল অধিকার কর্মী নিখিল পাওয়া কাশ্মীরের ইন্টারনেটের এ পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, ‘খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে এটা হলো ইন্টারনেট বন্ধ রাখা ও ইন্টারনেটের ওপর নিষেধাজ্ঞার চাদর দিয়ে দেয়া। আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে এটি দিল্লিতে করা যাবে?’
গত গ্রীষ্মে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসন ও রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করার পর কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করে। সেই সাথে নাগরিক অধিকার কঠোরভাবে হ্রাস এবং ইন্টারনেট, সেলফোন, ল্যান্ডলাইন ও ক্যাবল টিভির মতো তথ্য প্রবাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। সরকার যুক্তি দেখায় যে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ দমনে এটা দরকার ছিল।
ডিজিটাল বিশেষজ্ঞরা বলছেন কাশ্মীরে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত মারাত্মক। ইয়েল ল স্কুলের ইনফরমেশন সোসাইটি প্রজেক্টের সাথে যুক্ত থাকা ফেলো প্রাণেশ প্রকাশ বলেন, ‘কাশ্মীরে ইন্টারনেট দমন বিশ্বের যেকোনো জায়গার নিষেধাজ্ঞার তুলনায় গুরুতর। এটা চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটা ভারতে গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেয়ার একটি পদক্ষেপ।’
ইন্টারনেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা ২৫ জানুয়ারি আংশিকভাবে তুলে নেয়ার পর এখন কিছু কাশ্মীরি বন্ধ সাইটগুলোতে ভিপিএনের মাধ্যমে প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবদের ঢুকতে দিচ্ছেন। তারা এসব সাইটের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন।
সোয়েইব রসুল নামে এক ছাত্র বলেন, ‘তারা ছয় মাস আমাদের নীরব করে রেখেছিল। এখন তারা একটি জানলা খুলে দিয়েছে। আমরা বিশ্বকে জানিয়ে দেব ভারত আমাদের সাথে কী করেছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকারের কাছে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া একটি প্রিয় কৌশল। নয়াদিল্লিতে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভের সময়ও ইন্টারনেট ও সেলফোন সেবা ঘন ঘন ব্যাহত হয়েছে।
মোদি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত ভারত জুড়ে ৩৬৫ বারের বেশি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছে বলে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কাজ করা একসেস নাউ জানিয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞার এক-তৃতীয়াংশের বেশি প্রয়োগ করা হয়েছে কাশ্মীরে। কিছু নিষেধাজ্ঞা কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে।