সংসদীয় অনাস্থা ভোটে পদচ্যুত হওয়ার পরেও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি তার সমর্থকদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার সারাদিন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন কয়েক দফা মুলতুবি হওয়ার পর মধ্যরাতের পর অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিষদের ৩৪২জন সদস্যের মধ্যে ১৭৪ জন সদস্য তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ভোট দেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম একজন প্রধানমন্ত্রীকে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হল।
রবিবার ইমরান খানের উত্তরসূরি নির্বাচিত হবেন এবং সোমবার সংসদে শপথ নেবেন। ইমরান খানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ।
শাহবাজ শরীফ বিরোধী দলগুলোর মিলিত জোটের সবচেয়ে বড় দলের প্রধান। আর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ইমরান খানের মনোনীত প্রার্থী হবেন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি।
শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার শীতল সম্পর্কের মধ্যে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হয়। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং পাকিস্তানি রুপির মানের পতনের কারণে বিরোধীরা ইমরান খানের সরকারকে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
আরও পড়ুন: অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেন ইমরান খান
ইমরান খান দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করেছে। তার স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি ওয়াশিংটনের অসন্তুষ্টির কারণ।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় তিনি তার বৈদেশিকনীতি তাদের পছন্দ মতো নির্ধারণ করেন।কারণ তার নীতি প্রায়ই চীন ও রাশিয়ার পক্ষে চলে যায়। ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশীদারিত্বেরও কঠোর বিরোধী।
খান বলেন, রাশিয়া ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকের বিরোধিতা করেছিল ওয়াশিংটন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দ্য স্টিমসন সেন্টারের পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ থ্রেলকেল্ড বলেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও খান প্রায়ই বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করতেন।
তবে, ২০২৩ সালের আগস্টের আগে দেশটির সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা নেই। এমনকি যদি নতুন প্রধানমন্ত্রী আগাম নির্বাচনের পক্ষে থাকেন, তাহলেও অক্টোবরের আগে নির্বাচন হবে না।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন যারা নির্বাচনের তত্ত্বাবধান করে,তারা গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিল যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে ২০১৭ সালের আদমশুমারির ফলাফলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচনী এলাকাগুলিকে পুনরায় সারিবদ্ধ করার কাজ শেষ করতে হবে।
রবিবারের ভোটের পরে ইমরান খান তার সমর্থকদের গভীর রাতে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এসময় তার সমর্থকেরা বিশালাকার ইস্পাতের কন্টেইনার দিয়ে পার্লামেন্ট এবং রাজধানী ইসলামাবাদের কূটনৈতিক এলাকার প্রধান রাস্তাগুলো অবরুদ্ধ করে।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের এশিয়া প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর মাইকেল কুগেলম্যান পাকিস্তানের জন্য একটি উত্তাল সময়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের অধিবেশন শুরু
কুগেলম্যান বলেছেন, আগামী মাসগুলো রাজনৈতিকভাবে উত্তাল সময় পার করবে পাকিস্তান।
ইমরান খানের সরকার ১৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বজায় রাখায় এবং প্রবাসী পাকিস্তানিদের কাছ থেকে গত বছর রেকর্ড ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আনার কৃতিত্বও রয়েছে। এছাড়া ইমরান খানের দুর্নীতিবিরোধী খ্যাতি প্রবাসী পাকিস্তানিদের বাড়িতে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করেছে। তার সরকার করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা এবং দেশব্যাপী শাটডাউনের পরিবর্তে ‘স্মার্ট লকডাউন’ বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক প্রশংসাও পেয়েছে।
কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সেনাবাহিনী দেশটির ৭৫ বছর স্বাধীনতার ইতিহাসের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি শাসন করেছে এবং বেসামরিক সরকারগুলোকেও পরোক্ষভাবে চালিত করেছে।
খানের বিরোধীরা বলছেন, পানামা পেপারসে নাম আসার পর দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নওয়াজ শরিফ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয় ইমরান খান।
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরীফকে পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেছেন। পাকিস্তানের একটি আদালতে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তিনি স্ব-আরোপিত নির্বাসনে লন্ডনে বসবাস করছেন। তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছিল।
গত নভেম্বরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরান খানের সম্পর্কের ফাটল শুরু হয়েছিল। যখন তিনি নতুন গোয়েন্দা প্রধান নিয়োগ নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন।
গত সপ্তাহে জাভেদ বাজওয়া ইমরান খানের মার্কিন বিরোধী অবস্থান থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
বাজওয়া বলেছে, পাকিস্তান তার বৃহত্তম রপ্তানি বাণিজ্য অংশীদার চীন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। এবং তিনি রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার নিন্দা করেন।