জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার অস্তিত্বগত হুমকির সম্মুখীন বিশ্বের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি জরুরি মিশন নিয়ে জাতিসংঘ কৃষি উন্নয়ন তহবিলের নতুন প্রধান হিসেবে উন্নয়ন অর্থ বিশেষজ্ঞ আলভারো লারিও দায়িত্ব নিয়েছেন। শনিবার তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
স্প্যানিশ নাগরিক লারিও ২০১৮ সাল থেকে ইফাদের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কয়েক লাখ ক্ষুদ্র কৃষক,বৈশ্বিক ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে কাজে লাগানোর প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বোঝা বাংলাদেশকে একা বহন করতে হবে না’
তিনি বলেন,‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা,জলবায়ু পরিবর্তন এবং সংঘাত বিশ্বের গ্রামীণ দরিদ্রদের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলায় আমাদের মিশন এর চেয়ে বেশি জরুরি ছিল না।’
তিনি আরও বলেন,‘ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য আমাদের শক্তি কখনই বেশি ছিল না। তাই আমরা স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য প্রতিশ্রুতি ও সম্পদ সংগ্রহ করি।’
লারিও ২০৩০ সালের মধ্যে দরিদ্র গ্রামীণ সম্প্রদায়ের ওপর তাদের প্রভাব দ্বিগুণ করার জন্য ইফাদ-এর লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শুক্রবার রোম থেকে দেয়া তার বার্তা অনুযায়ী,তহবিলের জন্য অগ্রাধিকার হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনকে এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে আংশিকভাবে এটা করা হবে।
দরিদ্র ক্ষুদ্র কৃষকরা বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য উৎপাদন করে। কিন্তু জলবায়ু অর্থায়নের দুই শতাংশেরও কম পায় তারা এবং তারা খরা, বৈরি আবহাওয়ায় ফসলের ক্ষতির মতো পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিক ত্রাণের ওপর নির্ভরতার জন্য সংকট থেকে সংকটময় পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা যদি এখন থেকে পাঁচ বছর পর আবার একই জায়গায় ঘুরে আসা ফেরাতে চাই, তাহলে আমাদের মধ্যমেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে।এবং এর অর্থ খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের চেয়ে কম কিছু নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি সরকার ও জাতিসংঘ একা করবে না। এটি সরকারি ও বেসরকারি খাতের জন্য সমানভাবে একটি ভাগ করা কাজ। যেহেতু আমরা সকলেই খাদ্য নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার সুবিধাগুলি ভাগ করে নিতে পারি। ঠিক তেমনি আমরা এসব কাজ করতে ব্যর্থ হলে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো আমরা সবাই একসঙ্গে ভোগ করব।’
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ জরুরি: গুয়েন লুইস
ইফাদ জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা, যা একটি আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থাও। এটি একমাত্র বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন সংস্থা; যা একচেটিয়াভাবে কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, উৎপাদনশীল, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই করে রূপান্তরের জন্য নিবেদিত।
১৯৭৮ সাল থেকে সংস্থাটি গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মাঝে কম সুদের ঋণ এবং অনুদানে ২৩ বিলিয়নের বেশি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। যা খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, পুষ্টির উন্নতি এবং বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ও প্রান্তিকদের মধ্যে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করে এমন প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় বিলিয়নেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে।
২০২০ সালে আর্থিক লেনেদেনের জন্য সিএফও এবং সহযোগী ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে লারিও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ তালিকাভুক্ত করে তহবিলের জন্য আরও বেশি সংস্থান জোগাড়ের জন্য প্রস্তুত হন।
তার দায়িত্বাধীন ইফাদ প্রথম জাতিসংঘের তহবিল যারা পাবলিক ক্রেডিট রেটিং পেয়েছে।
২০২২ সালে দুটি প্রাথমিক প্রাইভেট-প্লেসমেন্ট বন্ডের সঙ্গে মোট ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ফিচ এজেন্সির মাধ্যমে সেই ডবল এ প্লাস রেটিং ইফাদকে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ সুরক্ষিত করতে সক্ষম করেছে।
লারিও ১ অক্টোবর থেকে চার বছর দায়িত্ব পালন করবেন। গিলবার্ট এফ. হাউংবো,সাবেক টোগোলিজ প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রধান হয়েছেন।
লারিও তার স্থানীয় স্পেনের কমপ্লুটেন ইউনিভার্সিটি থেকে আর্থিক অর্থনীতিতে পিএইচডি করেছেন এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিনান্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন।
তহবিলে সংযুক্ত হওয়ার আগে তিনি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনে ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন এবং বেসরকারি খাতের সম্পদ ব্যবস্থাপনা শিল্প এবং গবেষণাখাতে নানারকম ভূমিকা পালন করেছেন।
আরও পড়ুন: সরকার ওজনস্তর রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে কাজ করছে: জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী