ভারতের পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পরও জোটের শরিকদের ওপর নির্ভর করে টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি।
রবিবার (৯ জুন) নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে শপথ নেন মোদি এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
জওহরলাল নেহরুর পর দ্বিতীয় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসছেন ৭৩ বছর বয়সী এই নেতা।
২০১৪ ও ২০১৯ সালে বিপুলভোটে জয় পেলেও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে সরকার পরিচালনার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয় মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে মোদির ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট আসন পেয়েছে।
সংসদে এক দশক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর এবারই প্রথম আঞ্চলিক শরিকদের সমর্থন নিয়ে মোদিকে সরকার গঠন করতে হলো।
বুধবার প্রকাশিত চূড়ান্ত নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, মোদির বিজেপি ২৪০টি আসনে জয়লাভ করেছে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২টি আসনের চেয়ে অনেক কম। এনডিএ জোটের দলগুলো মিলে ৫৪৩ সদস্যের সংসদের নিম্নকক্ষে ২৯৩টি আসন পেয়েছে।
মোদির জোট সরকার এখন ক্ষমতায় থাকার জন্য মূলত দুটি প্রধান আঞ্চলিক মিত্র- দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের তেলুগু দেশম পার্টি এবং পূর্বাঞ্চলীয় বিহার রাজ্যের জনতা দলের (ইউনাইটেড) ওপর নির্ভর করছে।
এদিকে, মোদির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, পুনরুত্থিত কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন ভারত জোট প্রত্যাশার চেয়ে শক্তিশালী লড়াই করে গত নির্বাচনের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে ২৩২টি আসন জিতেছে।
ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়, যারা দেশটির ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ; তাদের কাছে এই কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী একজন ‘চ্যাম্পিয়ন’। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিশ্বব্যাপী ভারতের অবস্থানের উন্নতির জন্য কৃতিত্ব দেয় তার সমর্থকরা।
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা দেশের সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ এবং ভিন্নমত ও মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য জায়গা সংকুচিত করে ভারতের গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষ জাতি হিসেবে এর অবস্থানকেও ক্ষুণ্ন করেছে।
এছাড়াও মোদির রাজনৈতিক বিরোধীরা তার সরকারের অর্থনৈতিক রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলছে, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও উচ্চ বেকারত্ব এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের কথা।
শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজুসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।