উন্নয়নশীল বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশের নেতারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে বুধবার তাদের মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। যদিও এর একদিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এটিকে পশ্চিমা বিরোধী বলে যে আভাস দিয়েছিলেন, কর্মকর্তারা তা এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত উদীয়মান অর্থনীতির গ্রুপ ব্রিকসের সম্প্রসারণ ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। ব্রিকস গঠনের পর পেরিয়ে গেছে এক দশকেরও বেশি সময়।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০টিরও বেশি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই গ্রুপে যোগদানের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে সৌদি আরব সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দেশ।
কোভিড-১৯ মহামারির পর সশরীরে গ্রুপের বৈঠকের জন্য প্রথমবারের মতো চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ ব্লকের চার নেতা জোহানেসবার্গে রয়েছেন। ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।এ কারণে তিনি সশরীরে সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। তবে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকছেন।
মঙ্গলবার শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে প্রচারিত রাশিয়ান নেতার পূর্বে ধারণ করা ১৭ মিনিটের ভিডিও ভাষণে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের শাস্তি হিসেবে রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পশ্চিমাদের তিরস্কার করেন।
তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনকে তার কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো থেকে শস্য বহনের অনুমতি দেওয়ার একটি সমালোচনামূলক চুক্তি গত মাসে থামিয়েছিল রাশিয়া। তবে রাশিয়ার শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সেটি পুনঃস্থাপন করা হবে না।
জোহানেসবার্গে তিন দিনের চলমান আলোচনায় ব্রিকস কর্মকর্তারা রাশিয়া ও চীনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে যেন গ্রুপটি পশ্চিমা বিরোধী না হয় সে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পুতিন তার ভাষণে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক বিষয়কে সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন।
চীনের প্রধান নেতা শির বক্তব্য পাঠ করেন দেশটির একজন মন্ত্রী। এতে মার্কিন-চীন অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। এ ছাড়া ‘নতুন শীতল যুদ্ধ’ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এতে।
আরও পড়ুন: ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে এজেন্ডাগুলোর অগ্রগতির আশা করছে রাশিয়া ও চীন
কর্মকর্তারা বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বুধবার শীর্ষ সম্মেলনের মূল পর্বের আলোচনার আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে জোহানেসবার্গের সাবারবানে নৈশভোজে আলোচনা শুরু করেছেন। রাশিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। এ ছাড়া পুতিনও সেই নৈশভোজে আলোচনায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
ব্রিকস সম্প্রসারণের পদক্ষেপকে পাঁচজন নেতাই নীতিগতভাবে সমর্থন করেছেন। যদিও নতুন সদস্যদের যোগদানের জন্য কী কী শর্ত পূরণ করতে হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
ব্রিকস একটি ঐকমত্যের সংস্থা এবং পাঁচটি সদস্য দেশকে যেকোনো সম্প্রসারণের আগে অবশ্যই একমত হতে হবে।
সদস্যদের অসম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রাধিকার এবং চীন ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে এই ব্লক কখনো কখনো কোনো নীতিগতভাবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
সম্প্রসারণের পাশাপাশি, ব্রিকস সদস্যদের একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের কথাও রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্লক মার্কিন ডলারভিত্তিক বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
বিশ্বের প্রভাবশালী মুদ্রা থেকে বেরিয়ে আসার যে ঘোষণা গ্রুপটি দিয়েছে, তাতে রাতারাতি ডলারের পতন ঘটাবে না। এ ছাড়া ঘোষণাটি বাস্তবায়নের জন্য এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তি করতে পারেনি।
আরও পড়ুন: ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে হাসিনা-মোদির সৌজন্য সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ফেডারেল রিজার্ভের গবেষকদের গণনা অনুসারে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডলারে বাণিজ্য হয়েছে আমেরিকায় ৯৬ শতাংশ এবং এশিয়ায় ৭৪ শতাংশ এশিয়ায়। ইউরোপের বাইরে অন্য সব জায়গায় ৭৯ শতাংশ বাণিজ্য ডলারে করা হয়, যা ডলারকে বিশ্বের প্রধান মুদ্রার মর্যাদা দেয়।
এখনো প্রভাবশালী এ ডলার উন্নয়নশীল বিশ্বের যন্ত্রণা হয়ে রয়েছে। বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের অনেকের অভিযোগ, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্বার্থ দেখে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও রাশিয়া তাদের নিজস্ব এজেন্ডাগুলোর সুবিধা নিতে পেরে বেশি খুশি। কিন্তু তারা এটাও লক্ষ্য করে যে ২০টিরও বেশি উন্নয়নশীল দেশ ব্রিকসে যোগদানের জন্য আবেদন করেছে এবং অন্তত আরও ২০টি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
চায়না গ্লোবাল সাউথ প্রকল্পের কোবাস ভ্যান স্ট্যাডেন বলেন ‘ব্রিকস ব্লকের অর্জন যাই হোক না কেন, এর অস্তিত্ব ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির সারিতে যোগদানের চেষ্টা করা বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থায় দক্ষিণাঞ্চলের অসন্তোষকে তুলে ধরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অসন্তুষ্টি তাদের চীনের চারপাশে জড়ো হওয়ার কারণ হবে কি না তা একটি ভিন্ন বিষয়।‘
আরও পড়ুন: ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গ পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা