যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ৬ জিম্মির দুজনকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। বাকিদেরও ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় সময় শনিবারে (২২ ফেব্রুয়ারি) তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে ৬০২ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
এই বন্দি বিনিময়ের মধ্য দিয়ে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। ওই ছয় জিম্মির মধ্যে রয়েছেন, এলিয়া কোহেন (২৭), তাল শোহাম (৪০), ওমরশেম তোভ (২২) ও ওমর ওয়েনকার্ট (২৩)।
ইসরায়েল থেকে যারা মুক্তি পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। এছাড়া মুক্তি পাওয়া আরও ৬০ বন্দি দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলে কারাদণ্ড ভোগ করে আসছিলেন। আরও রয়েছেন আগে বন্দিবিনিময় চুক্তিতে মুক্তি পেয়েছিলেন এমন ৪৭ জন। মুক্তি পেতে যাওয়া বাকি ৪৪৫ জন গাজায় যুদ্ধচলাকালীন আটক হয়েছিলেন।
দোহাভিত্তিক আল-জাজিরার খবর বলছে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
আরও পড়ুন: হামাস একটি অজ্ঞাত লাশ ফেরত দিয়েছে, অভিযোগ ইসরায়েলের
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার হামাসের সদস্যদের হাতে জিম্মি হয়েছিলেন তারা। তবে হিশাম আল-সায়েদ (৩৬) ও আভেরা মেঙ্গিস্তু (৩৯) প্রায় এক দশক আগে গাজায় প্রবেশ করার পর হামাসের হাতে আটক হয়েছিলেন।
এর আগে পাল্টাপাল্টি অভিযোগে বেশ কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়লেও ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া চুক্তিটি শেষ হয়েছে। চুক্তির শর্তানুসারে প্রথম ধাপে ৩৩ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে হস্তান্তর করার কথা ছিল। এরই মধ্যে বেশির ভাগ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। কয়েকশ ফিলিস্তানিও ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) যুদ্ধবিরতির চুক্তির আওতায় চলমান বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে জিম্মি অবস্থায় মারা যাওয়া চার ইসরায়েলির লাশ ফেরত দেয় হামাস। যাদের মধ্যে ছিল ইসরায়েলের কেফির বিবাস ও এরিয়েলের সঙ্গে তাঁদের মা জিম্মি শিরি বিবাসের মরদেহ।
আরও পড়ুন: হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি: চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা
তবে কেফির ও এরিয়েলের মরদেহ শনাক্ত করা গেলেও শিরির মরদেহের স্থলে অজ্ঞাতনামা একটি মরদেহ শনাক্ত করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। অজ্ঞাতনামা মরদেহ হস্তান্তরের মাধ্যমে হামাস যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বোনয়ামিন নেতানিয়াহু প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।
তবে হামাস জানিয়েছে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত শিরি ও তাঁর দুই ছেলের মরদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের পর শিরির দেহ অন্য মরদেহের সঙ্গে মিশে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) হামাস আরেকটি মৃতদেহ হস্তান্তর করেছে। ওই মরদেহটি শিরির বলে ইসরায়েলি ফরেনসিক কর্মকর্তারা পরিচয় নিশ্চিত করেছেন বলে নিহতের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে।
চলমান এই অস্থিরতা স্বত্তেও শনিবার ৬ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছে হামাসের সমরিক শাখা কাশেম ব্রিগেড। আগামী সপ্তাহে আরও ৪ মরদেহ হস্তান্তরের কথা রয়েছে হামাসের।
যুদ্ধ বিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে ৬৪ ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির কথা রয়েছে, বিনিময়ে মুক্তি পাবেন কয়েক শ ফিলিস্তিনি। তবে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।