ইউক্রেনের মারিউপোলের একটি ইস্পাত কারখানার সুড়ঙ্গে অবরুদ্ধ সেনারা রুশ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা দু’মাস ধরে দেশটির কৌশলগত বন্দর নগরী মারিউপোলে রুশ সেনাদের ক্রমবর্ধমান মরিয়া আক্রমণে শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ওই সেনাদের মধ্যকার এক কমান্ডারের স্ত্রী ক্যাটরিনা প্রোকোপেনকো জানান, তারা ‘শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধের’ অঙ্গীকার করেছে।
তিনি বলেন, তার স্বামী আজভ রেজিমেন্টের কমান্ডার ডেনিস প্রোকোপেনকোর সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়েছে। ‘তারা আত্মসমর্পণ করবে না। তারা কেবল একটি অলৌকিক ঘটনার (ঈশ্বরের সাহায্যের) আশা করছে।’
এদিকে আগামী সোমবার রাশিয়ার বিজয় দিবস। এ দিনটি রাশিয়ার ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে বড় দেশপ্রেম দিবস, যা নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়কে নির্দেশ করে।
রাশিয়ার সাম্প্রতিক অনুমান অনুযায়ী প্রায় দুই হাজার ইউক্রেনীয় যোদ্ধা মারিউপোলের বিস্তৃত আজোভস্টাল ইস্পাত কারখানার নিচে টানেল এবং বাঙ্কারগুলোর একটি গোলকধাঁধায় আটকে আছে। এছাড়া কয়েকশ’ বেসামরিক লোকও সেখানে আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার রাতের ভিডিও ভাষণে বলেছেন, ‘অনেক আহত (যোদ্ধা) আছে, কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ করছে না। তারা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে।’
আরও পড়ুন: মারিউপোলের ইস্পাত কারখানায় রুশ হামলা জোরদার
তিনি বলেন, অব্যাহত রুশ হামলার ফলে বাকি বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আন্তন গেরাশচেঙ্কো বলেছেন, লেআউটটি জানতেন এমন একজন ইলেকট্রিশিয়ানের সাহায্যে রুশ সেনারা ভিতরে (কারখানার) প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।
গেরাশচেঙ্কো বুধবার পোস্ট করা একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘রাশিয়ানরা বিশ্বাসঘাতকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে এই টানেলগুলোতে আক্রমণ শুরু করে।’
তবে ক্রেমলিন এ বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি।
মারিউপোলের পতনের ফলে ইউক্রেন একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হারাবে। এর ফলে রাশিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপে একটি স্থল করিডোর স্থাপন করতে পারবে। ২০১৪ সালে যেটিকে ইউক্রেন থেকে দখল করে নেয় রাশিয়া।
ধারণা করা হচ্ছে ক্রেমলিনের পূর্বের শিল্পাঞ্চল ডনবাস এরপর সেনাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হবে।
আজভ রেজিমেন্টের ডেপুটি কমান্ডার ক্যাপ্টেন স্যাভিয়াতোস্লাভ পালামার ইউক্রেনীয় টিভিতে ইস্পাত কারখানা থেকে বেসামরিক নাগরিক এবং আহত যোদ্ধাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেছেন সেনারা ‘সঠিক চিকিৎসার অভাবে যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছে।’
ক্রেমলিন বারাবার ইউক্রেনের অবরুদ্ধ সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনীয় সেনারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে বেসামরিক নাগরিকদের স্থানানন্তরের বাধা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে ইইউ
‘ইউক্রেনের খেরসনকে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া’