বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, একমাস আগে সামরিক অভ্যুত্থান হওয়ার পর এটিকে সবচেয়ে 'রক্তক্ষয়ী দিন' হিসেবে বলছে জাতিসংঘ।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের দূত ক্রিস্টিন স্ক্রেনার বার্গেনার জানান, দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে ভয়াবহ ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি জানান, অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন এবং বহু আহত হয়েছেন।
বার্গেনার বলেন, একটি ভিডিও ক্লিপে পুলিশকে দেখা যায় একজন বিক্ষোভকারীকে গুলি করতে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত
মিয়ানমার বাহিনীর হাতে বিভিন্ন শহরে নিহত ১৮: জাতিসংঘ
তিনি বলেন, ‘অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে সেগুলো ৯ মিলিমিটার সাব মেশিনগান ধরণের অস্ত্র, অর্থাৎ আসল গুলি ব্যবহার করা হয়েছে বিক্ষোভকারীদের ওপর।’
মিয়ানমারের ভেতর থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর কোন সতর্কবার্তা না দিয়ে সরাসরি গুলি করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মধ্য মিয়ানমারে মনইওয়া অঞ্চলে অন্তত ছয় জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
রয়টার্সকে দেয়া তথ্যে স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানান, সেখানে আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
ওই অঞ্চলের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘তারা আমাদের দিকে জলকামান নিয়ে আক্রমণ করেনি, ছত্রভঙ্গ হওয়ার কোন সতর্কবার্তাও দেয়নি। তারা সরাসরি আমাদের দিকে গুলি চালিয়েছে।’
মান্ডালায় এলাকার একজন বিক্ষোভকারী জানান, তার বাসার কাছেই বিক্ষোভকারীদের দিকে কোনো সতর্কবার্তা না দিয়েই গুলি ছোড়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
তিনি বলেন, ‘তারা সরাসরি গুলি করা শুরু করে। তারা রাবার বুলেটও ব্যবহার করেছে, কিন্তু আসল বুলেটও ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে নির্দয়ভাবে হত্যার উদ্দেশে।’
এদিকে, সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবরের প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনী কোন মন্তব্য করেনি।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার জান্তা সরকারের কারফিউ জারি, সমাবেশ নিষিদ্ধ
ফেসবুকের পর মিয়ানমারে এবার বন্ধ হলো টুইটার, ইনস্টাগ্রামও
মিয়ানমারের সংকট বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ালেও দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যুত্থানের সমালোচনা করেনি রাশিয়া এবং চীন। দেশ দুটি মিয়ানমারের পরিস্থিতিকে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে মনে করে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। অভ্যুত্থানের পর দেশটির নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতা-কর্মীদের আটক করে জান্তা সরকার। আন্দোলন হটাতে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী গত রবিবার গুলি চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যা করে।