আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সভাপতি বিচারপতি আবদুলকাউই আহমেদ ইউসুফ বলেন, আইসিজির অভিমত হচ্ছে যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে এখনও অতিশয় অরক্ষিত অবস্থায় আছে।
আদালত আরও উল্লেখ করে, রোহিঙ্গাদের রক্ষার উদ্দেশে অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা মানতে মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আদালতের গ্রেট হল অব জাস্টিসে এক ঘণ্টাব্যাপী কার্যক্রম চলার পর বিচারকরা রায় ঘোষণা করেন। তারা আদেশ অনুযায়ী মিয়ানমার কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা চার মাসের মধ্যে দেশটিকে আদালতে জানানোর নির্দেশ দেন। সেই সাথে প্রতি ছয় মাস পরপর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আদালতে শুনানি চলতে থাকবে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানে গণহত্যা চালানোর জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া আইসিজেতে যে মামলা করেছিল তার শুনানি নিয়ে আদালত আজ এ রায় দেয়।
গত মাসে শুনানিতে মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করা আইনজীবীরা আদালতে মানচিত্র, স্যাটেলাইট ইমেজ ও ছবি উপস্থাপনের মাধ্যমে দাবি করে যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যার সমপরিমাণে হত্যা, ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
এ শুনানি ছিল এক লক্ষণীয় ঘটনা। কারণ এতে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের প্রাক্তন প্রতীক অং সান সু চি সেই সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন যারা তাকে প্রায় ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দী করে রেখেছিল।
বর্তমানে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি দেশটির তৎকালীন জান্তা সরকারের আমলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক কঠোর বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করে। এ সময় গণধর্ষণ, হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়াসহ জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
সু চি গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘ আদালতে বলেন, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ‘সমন্বিত ও ব্যাপক সশস্ত্র হামলার’ ফলে সামরিক বাহিনী যে জবাব দেয় তার দুর্ভাগ্যজনক ফল ছিল কয়েক লাখ মুসলিমের দেশত্যাগের ঘটনা।
তিনি বিচারকদের গণহত্যার মামলাটি খারিজ এবং অন্যায়ের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সামরিক বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
উল্লেখ, আইসিজে’র আদেশ মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে দরকার হলে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হবে কি না নির্ভর করছে জাতিসংঘের ওপর।
ধারণা করা হচ্ছে যে এ মামলায় চূড়ান্ত রায় দিতে আদালত কয়েক বছর সময় নিতে পারে।