ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান।
বুধবার (২৫ জুন) এ সংক্রান্ত ভোটাভোটির মাধ্যমে সিদ্ধান্তটি দেশটির পার্লামেন্টে অনুমোদিত হয়। দেশটির রাষ্টাত্ত্ব সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজের খবরে এসব তথ্য জানা যায়।
পার্লামেন্টের উন্মুক্ত অধিবেশনে ২২৩ জন প্রতিনিধির মধ্যে ২২১ জন এই পরিকল্পনার পক্ষে, বিপক্ষে ০ ভোট এবং ১ জন সংসদ সদস্য ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন।
জাতিসংঘ সনদসহ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমাবর্ষণের পরই এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়।
ইরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন: ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চান না ট্রাম্প
ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ এবং জনগণের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, এই হামলা পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) লঙ্ঘন করেছে এবং এর কারণে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি থামানো যাবে না।
ইরান স্পষ্টভাবে তার শান্তিপূর্ণ পরমাণু উন্নয়ন কর্মসূচির চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সব বিকল্প উন্মুক্ত রাখবে বলে জানিয়েছে।
মার্কিন বিমান হামলা সম্পর্কে যা জানা গেল
গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে, ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহানে অবস্থিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে সঙ্গে সঙ্গেই ‘অসাধারণ সামরিক সাফল্য’ বলে আখ্যা দেন। তার দাবি, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সুবিধাগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
কিন্তু একটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, ট্রাম্প এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক দশকের জন্য পিছিয়ে গেছে।’
পশ্চিমা নিরাপত্তা বিশ্লেষক গর্ডন করেরার মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ব্যবহৃত একাধিক বোমা লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইরান স্থাপনাগুলো নির্মাণে খুবই শক্তিশালী কংক্রিট ব্যবহার করেছে। এর ফলে, স্থাপনার মূল কাঠামো বা যন্ত্রপাতি পর্যন্ত বোমাগুলো পৌঁছাতে পারেনি।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির পর কূটনীতির পথে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র
১২ দিনের যুদ্ধের পর বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চলছে। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ৬১০ জন ইরানি নিহত হয়েছেন। অপর দিকে ইরানের মিসাইল হামলায় ২৮ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।