যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে দেশটির নিম্ন আদালতসমূহের ‘নেশনওয়াইড ইনজাংশন’ বা পুরো দেশে একসঙ্গে আদেশ জারির ক্ষমতা সীমিত করেছে। এর ফলে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধের উদ্যোগ আংশিক কার্যকরের পথ খুলে গেছে। এর আগে, ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি আদেশ বাতিল করেছিলেন দেশটির নিম্ন আদালতের বিচারকরা।
শুক্রবার (২৭ জুন) সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ওই রায়ে বলা হয়েছে, কোনো ফেডারেল আদালতের আদেশ পুরো দেশের জন্য একই সঙ্গে বাধ্যতামূলক নয়। এখন থেকে শুধু মামলার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংগঠনের ক্ষেত্রেই এসব আদেশ প্রযোজ্য হবে।
এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনল। আগে দেশটির ৯৪টি জেলা আদালতের এক হাজারের বেশি বিচারক পুরো যুক্তরাষ্ট্রে একসঙ্গে যেকোনো সরকারি নীতিমালা স্থগিতের আদেশ দিতে পারতেন। এখন সেই ক্ষমতা সীমিত করা হলো।
তবে আদালত এখনও জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আদেশ পুরোপুরি বৈধ কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেয়নি।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনকারীদের জন্য নতুন নির্দেশনা
এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বাস করা অভিবাসীদের জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়ম বাতিলের ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বিভিন্ন রাজ্য ও অধিকারকর্মীরা দাবি তোলেন।
ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন কয়েকটি অঙ্গরাজ্য, মানবাধিকার সংগঠন এবং অভিবাসীদের পক্ষে কাজ করা বিভিন্ন গ্রুপ এ নিয়ে আদালতে মামলাও করেছে। এরপর আদালত সেই আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে।
কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের সর্বশেষ রায়ের ফলে এই আদেশ এখন কেবল মামলাকারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অংশে ট্রাম্পের আদেশ আংশিকভাবে কার্যকর হতে পারে।
রায়ের পর এটিকে বড় জয় বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে ভুলভাবে পুরো দেশে আদেশ জারির পথ বন্ধ হলো। এখন আমরা প্রয়োজনীয় নীতিমালা কার্যকর করতে পারব।’
এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন জানিয়েছে, আদালতের এ রায় সরকারের হাতে একটি ‘অবৈধ ও নিষ্ঠুর’ আদেশ আংশিক বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ রায়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এবং নতুন আইনি লড়াই শুরুর আশঙ্কা রয়েছে।
১৮৬৮ সালে গৃহযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়, যা ১৮৯৮ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে আরও সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।