বাইডেন জানান, তিনি এ সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশ জারি করছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা মিয়ানমার সরকারের ১০০ কোটি ডলারের তহবিল ব্যবহার করতে পারবেন না মিয়ানমারের জেনারেলরা।
শিগগিরই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মিয়ানমার জান্তা সরকারের কারফিউ জারি, সমাবেশ নিষিদ্ধ
‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে দখল করা ক্ষমতা ত্যাগ এবং বার্মার মানুষের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত,’ বলেন বাইডেন।
তিনি বলেন, নতুন এ নিষেধাজ্ঞা তার প্রশাসনকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ জব্দ করার অনুমতি দেবে যা মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের সহায়তা করত। তবে স্বাস্থ্যসেবা, নাগরিক সমাজ ও মিয়ানমারের জনগণ সরাসরি উপকৃত হয়, এমন খাতগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান বাইডেন।
তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে নিষেধাজ্ঞার নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো চিহ্নিত করার পরিকল্পনা রয়েছে মার্কিন প্রশাসনের।
ফেসবুকের পর মিয়ানমারে এবার বন্ধ হলো টুইটার, ইনস্টাগ্রামও
এদিকে মিয়ানমারের নতুন সামরিক শাসকরা তাদের ক্ষমতা দখলের বিরোধিতাকারীদের দমন করার অভিসন্ধি সোমবার প্রকাশ করেছেন। দেশটির সবচেয়ে বড় দুই শহরে শান্তিপূর্ণ গণপ্রতিবাদ তাৎক্ষণিকভাবে নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে রাজধানী নেপিদোতে শত শত বিক্ষোভকারীর ওপর পুলিশের জলকামান নিক্ষেপের পর এ বিধিনিষেধের আদেশ আসে।
দেশের দুই বৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুন ও মানডালায় পাঁচজনের অধিক ব্যক্তির জড়ো হওয়া এবং মোটরযান নিয়ে মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সাথে রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত আরোপ করা হয়েছে কারফিউ। এই দুটি শহরে শনিবার থেকে হাজার হাজার মানুষ আন্দোলন করে আসছেন।
‘মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করবে জাতিসংঘ’
বিক্ষোভকারীরা সোমবার ইয়াঙ্গুনের বড় একটি মোড়ে সমাবেশ করেন। তারা প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে তিন-আঙুল স্যালুট প্রদর্শন এবং বিভিন্ন দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। সেই সাথে দেশের উত্তর, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের শহরগুলোতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
নতুন বিধিনিষেধের আদেশ শহর ধরে ধরে জারি করা হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে যে তা অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে দেয়া হবে। সেনাবাহিনী বলছে, লোকজনের আইনের শাসনের জন্য ক্ষতিকর বেআইনি কার্যক্রম চালানোর জবাবে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
রাজধানী নেপিদোতেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। এ শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে অনেক বেসামরিক সরকারি কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্য রয়েছেন। পাঁচ দশকের সামরিক শাসনের পর শুধুমাত্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণতন্ত্রের স্বাদ নিতে শুরু করা মানুষের মাঝে যে কীরকম রাগ বিরাজ করছে তা নেপিদোর বিক্ষোভে প্রতিফলিত হচ্ছে।
মিয়ানমারের সামরিক শাসনের প্রধান ঘটনাগুলো
ইয়াঙ্গুনের এক আন্দোলনকারী দাও মোই বলেন, ‘আমরা সামরিক জান্তা চাই না। আমরা কখনও এই জান্তাকে চাইনি। কেউ একে চায় না। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সবাই প্রস্তুত।’
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের সংসদে বসার দিন সামরিক অভ্যুত্থান হয়। সামরিক জেনারেলরা বলছেন যে ভোটে জালিয়াতি হয়েছিল। তবে দেশটির নির্বাচন কমিশন এ দাবি খারিজ করে দেয়।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সোমবার প্রথমবারের মতো বিক্ষোভ হওয়ার কথা স্বীকার করে দাবি করেছে যে তারা দেশের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশন এমআরটিভিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি পাঠ করে বলা হয়, ‘শৃঙ্খলা না থাকলে গণতন্ত্র ধ্বংস হতে পারে। রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা, জননিরাপত্তা ও আইনের শাসন লঙ্ঘনকারী কার্যক্রম রোধে আমাদের আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।’
জরুরি অবস্থা শেষে নতুন নির্বাচন: মিয়ানমার সেনাবাহিনী
তবে, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নেয়া সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইং ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো সোমবার রাতে টেলিভিশনে প্রচারিত ২০ মিনিটের এক ভাষণে বিশৃঙ্খলার কথা উল্লেখ করেননি।