রাষ্ট্র পরিচালিত গণমাধ্যম ঘোষণা করেছে যে কমান্ডার-ইন-চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ১২ মাসের জন্য দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেবেন।
ফোর্টিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্মিথ বলেছেন, ‘সামরিক বাহিনীর জরুরিভাবে এই সহিংস পরিস্থিতি পরিহার করা এবং আজকে আটক হওয়াদের নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেয়া উচিত। সামরিক বাহিনীকে এই আটক কার্যক্রম বন্ধ করা এবং যাদেরকে ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে তাদের নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত।’
এর আগে সোমবার ভোরের দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, সংসদ সদস্য এবং মানবাধিকার কর্মীদের আটক করেছে বলে জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ মোবাইল-যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
‘একটি সামরিক অভ্যুত্থান চলছে,’ বলেন ম্যাথু স্মিথ। ‘সামরিক বাহিনীর উচিত মোবাইল যোগাযোগের যে কোনো ব্লক তুলে নেয়া এবং মুক্ত মত প্রকাশের অধিকারকে সম্মান করা।’
সোমবার সকালে মিয়ানমারে নতুন সংসদ অধিবেশন বসার কথা ছিল। ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের এক সদস্য ফোর্টিফাই রাইটসকে বলেছেন, সামরিক বাহিনী নেপিডোতে সংসদের সকল বেসামরিক সদস্যকে আটক করেছে।
ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফলকে সম্মান করতে হবে এবং নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সংসদ আহ্বান করার অনুমতি দিতে হবে।’ ‘বিশ্বব্যাপী সকল দেশের সরকারকে সামরিক বাহিনীর এভাবে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের ঘটনায় দ্রুত তীব্র নিন্দা জানানো উচিত।’
মিয়ানমারের নতুন সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের আটকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
তিনি সেনাবাহিনীর হাতে আইনসভা, নির্বাহী ও বিচারিক ক্ষমতা স্থানান্তরের ঘোষণার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনাগুলো মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে কঠিন বাধা হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে।
মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ‘গণতন্ত্র, শান্তি, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের জনগণের প্রতি জাতিসংঘের সমর্থনকে পুনর্ব্যক্ত করেছেন মহাসচিব।’
২০২০ সালের ৮ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট প্রদান করেছে, এই নির্বাচনের ফলাফলে গণতান্ত্রিক সংস্কারের কঠিন বিজয়ের পথে মিয়ানমারের জনগণের সুস্পষ্ট ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে মিয়ানমার: সু চি, প্রেসিডেন্ট আটক
মহাসচিব সামরিক নেতৃত্বকে মিয়ানমারের জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানাতে এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো মতপার্থক্য সমাধান করা উচিত।
আরও পড়ুন: সু চি’র সাথে বরিস জনসনের আলোচনা, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: সু চির অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম
‘সব নেতাকে অবশ্যই মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে হবে, অর্থবহ সংলাপে লিপ্ত হওয়া, সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাকে পুরোপুরি সম্মান করতে হবে,’ বলেছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র।
মিয়ানমারের সামরিক টেলিভিশন বলেছে, সেনাবাহিনী এক বছরের জন্য দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। সোমবার সকালে সামরিক মালিকানাধীন মায়াওয়াদ্দি টিভিতে এক ঘোষক এই ঘোষণা দেন। সামরিক অভ্যুত্থানের হুমকির বিষয়ে উদ্বেগের পরেই এবং দেশটির নতুন সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে এই ঘোষণা এসেছে।
প্রতিষ্ঠিত অনলাইন নিউজ সার্ভিস, ইরাওয়াদ্দি জানিয়েছে যে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং দেশটির রাষ্ট্রপতি উইন মিন্টকে সোমবার ভোরে আটক করা হয়েছে। নিউজ সার্ভিসটি সু চির ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) মুখপাত্র মায়ো নিন্টের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে সু চির প্রতি আহ্বান
জাতিসংঘের আদালতে গণহত্যার অভিযোগ সু চি’র অস্বীকার
এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, আইন প্রণেতা এবং আঞ্চলিক মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও হেফাজতে নেয়া হয়েছে।