বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, নতুন ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস)’ বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের একীভূতকরণে অবদান রাখবে এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব তৈরি করবে।
তিনি বলেন, বিজিএমইএ পোশাক কূটনীতি উদ্যোগের অধীনে বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ক্রমাগত কাজ করছে।
তিনি বিজিএমইএ সদস্যদের একটি চিঠিতে বলেছেন, তিনি ডিসিটিএস প্রকল্প স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একটি শক্তিশালী পরামর্শ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছেন।
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।
ফারুক হাসান বলেন, যুক্তরাজ্য ছাড়াও তারা কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারে ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার; অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: মিরপুরে বিজিএমইএ হাসপাতালের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুলাই সময়কালে যুক্তরাজ্যে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা ২০২২ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে।
বিজিএমইএ প্রধান বলেন, আমরা আমাদের বাণিজ্যের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সমস্ত সমস্যা সমাধান করেছি এবং সেগুলি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার জন্য আমরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।
যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস)’ নামে একটি নতুন ট্যারিফ স্কিম চালু করেছে।
এই স্কিমটি ইউরোপিয় ইউনিয়নের জিএসপি স্কিমের জায়গায় নিয়েছে। এর অধীনে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়।
নতুন স্কিম অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর তৈরি পোশাকগুলো যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করার সময় যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ডিসিটিএস আমদানি করা কাঁচামাল ব্যবহার করে শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ করবে।
ডিসিটিএস ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস স্কিমের অনুরূপ। ২০২৪-৩৪ সালের জন্য ইইউ'র খসড়া জিএসপি প্রস্তাবে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যগুলো টেক্সটাইল সুরক্ষা ব্যবস্থার সম্মুখীন হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাজ্যের ডিসিটিএসে এ ধরনের টেক্সটাইল সুরক্ষা বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
তিনি বলেন, বিজিএমইএ এও বাংলাদেশ সরকার ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এমনকি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলোর জন্য কিছু আন্তর্জাতিক কনভেনশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ডিসিটিএস আরও নমনীয় বলে মনে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যাইহোক আমরা সামাজিক ও পরিবেশগত মান অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আরও এগিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, যেহেতু আমরা আমাদের শিল্পকে নিরাপদ এবং টেকসই করার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করছি ওকরছি। আমরা ব্রিটিশ পোশাকের ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতি ও আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি।
যুক্তরাজ্যের বাজার নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সবাইকে উৎসাহিত করেন বিজিএমইএ সভাপতি।
বিশেষত বাসার বাইরে পরার পোশাক, প্রথাগত পোশাক (ফরমাল) ও সব সময় ব্যবহারের উপযোগী পোশাক এবং সুতি ছাড়া অন্য কাপড়গুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে পারে।
যুক্তরাজ্যের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) কার্যকর হয়েছে যা বাংলাদেশসহ ৬৫টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী পণ্যের উপর ট্রেডিং নিয়মগুলোকে সহজ করে এবং শুল্ক কমিয়ে দেয়।
বাণিজ্য বৃদ্ধি, চাকরি বৃদ্ধি ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করবে ডিসিটিএস। এই নতুন পরিকল্পনা আধুনিক ও পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতির নিদর্শন।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন বলেছে, ডিসিটিএস-এ পরিবর্তনের অর্থ হলো বাংলাদেশ তৈরি পোশাকসহ রপ্তানির ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ইরাক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আশাবাদী বিজিএমইএ সভাপতি
বাংলাদেশ জুলাইয়ে আরএমজি রপ্তানি করে ৩.৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে: বিজিএমইএ