দিনাজপুরের হিলি এবং সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে পেঁয়াজের ট্রাক প্রবেশ করেছে বলে সেখানকার ইউএনবি প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
হিলি: বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ভারতীয় পেঁয়াজ বোঝাই কয়েকটি ট্রাক দেশে প্রবেশের মধ্য দিয়ে পণ্যটির আমদানি কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। এতে করে বন্দরের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
এদিকে, ভারতীয় পেঁয়াজের চালান আসায় দেশের বাজারে এর দাম কমতে শুরু করেছে। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে ৬-৮ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩২ টাকায়।
আরও পড়ুন: হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শনিবার শুরু
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। আজ শনিবার দেশে ভারতীয় পেঁয়াজের প্রথম চালানটি এসেছে। গত ২৮ ডিসেম্বর পেঁয়াজের ওপর থেকে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এর ফলে শনিবার পর্যন্ত আমরা প্রায় ছয় হাজার টনের মতো পেঁয়াজের এলসি করেছি। ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে আসা অব্যাহত থাকলে ২০-২২ টাকা কেজির মধ্যে ক্রেতারা কিনতে পারবেন।’
হিলি স্থলবন্দরের আড়তদার শাকিল আহমেদ ও ফেরদৌস হোসেন জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় দাম কেজিতে ৬-৮ টাকা করে কমে গেছে। দেশি পেঁয়াজ মানভেদে কেজি প্রতি ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই দিন আগেও তা ৩৬-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। দাম আরও কমে আসবে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত
খুলনার বাজারে নতুন পেঁয়াজ, মজুদ নিয়ে চিন্তিত টিসিবি
অনলাইনে ২৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে টিসিবির পেঁয়াজ
সাতক্ষীরা: ভোমরা কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে যে সন্ধ্যা নাগাদ নয়টি ভারতীয় ট্রাকে করে ২৪২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভোমরা বন্দরে ঢুকেছে। ভোমরার বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙা বন্দরে ২৫ ট্রাকেরও বেশি পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতি ট্রাকে ২৫ থেকে ৩০ টন পেঁয়াজ আছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আরাফাত হোসেন বলেন, ‘সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পর আজ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে বন্দরে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ধারা চলতে থাকলে দেশে পেঁয়াজের বাজারে দামের ঊর্ধ্বমুখী আচরণ হ্রাস পাবে।’
গেল বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেশের বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমদানিকারকরা মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিশর, তুরস্ক ও চীন থেকে বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করেন। এরপর কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে পেঁয়াজের মূল্য।
পেঁয়াজের দাম কমছে: ২০১৯-২০ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ১৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে ভারত।
চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর টানা দ্বিতীয় বছরের মতো পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর দাম কেজি প্রতি ১০০-১২০ টাকায় বেড়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: শত শত বস্তা পচা পেঁয়াজ ফেলে দিচ্ছে আড়তদাররা, তবুও কমছে না দাম
মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি
বাংলাদেশের পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২২ থেকে ২৫ লাখ টন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমদানি করা পরিমাণ আগে অনেক কম ছিল। যা গত ২০১৯ অর্থবছরে মাত্র ০.৪ মিলিয়ন টন ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর পরিমান ১১ লাখ টন ছুঁয়েছে।
রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় প্রধান এ পণ্যটি আমদানি করার জন্য ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বাজার সহনশীল করার জন্য এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে খুচরা বাজারে বিক্রি করছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে টিসিবি প্রতি কেজি ২৩ টাকা করে এ পণ্য সরবরাহের ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরেই দাম কমছে।
১৬ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গণমাধ্যমকে জানান, দেশে ৬ লাখ টন পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে এবং জনগণকে আতঙ্কিত না হতে বলেন।
টিসিবির তথ্য অনুসারে, ভারত প্রথমে এই পণ্যটির রপ্তানি বন্ধ করার পর গত বছর বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ৫৫৭.৮ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল।