কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে মানুষ ক্যাশলেস লেনদেনকে বেশি পছন্দ করছে। যার ফলে দেশে ক্রমবর্ধমান মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) কার্যক্রম ও লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিকাশ, রকেট ও অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেন ৯৯৪ কোটি টাকা
বিবি জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা ৮৯ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন।
তবে এখানে নগদের তথ্য যোগ করা হয়নি। এই ক্যাশ অ্যাকাউন্ট যোগ করলে লেনদেনের পরিমাণ আরও ২২ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।
সেই অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন দাঁড়াবে প্রায় এক দশমিক ১১ লাখ কোটি টাকা। তাহলে দৈনিক লেনদেন দাঁড়ায় তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানায়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সব জায়গায় টাকা পাঠানোর সুবিধার সঙ্গে কেনাকাটা, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, বিভিন্ন বিল পরিশোধ, ঋণ বিতরণসহ নতুন নতুন সেবা যুক্ত করা হচ্ছে।
ফলে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) ওপর মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি নির্ভরতা বাড়ছে। গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এখন ১৮ কোটিরও বেশি গ্রাহক রয়েছে। দৈনিক লেনদেন হয় প্রায় তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা প্রতিদিন এজেন্টদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে পারবেন।
আরও পড়ুন: মোবাইল ব্যাংকিং: মনোপলি নয়, সুস্থ প্রতিযোগিতা চায় সরকার
আগে দৈনিক আমানত ৩০ হাজার টাকার বেশি জমা দেয়া যেত না। কার্ড থেকে টাকা জমা দেয়ার সীমাও নির্ধারণ করা হয়নি। এখন একজন গ্রাহক অন্য গ্রাহককে মাসে দুই লাখ টাকা পাঠাতে পারবেন। আগে এই সীমা ছিল ৭৫ হাজার টাকা।
বিবি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, সুবিধাজনক লেনদেনের সুযোগ বিবেচনা করে এবং ক্যাশলেস সমাজকে উৎসাহিত করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধীরে ধীরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন সহজ করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘শহুরে জীবনে মানুষের বিশেষ প্রয়োজনে দেশে ই-কমার্স ও অনলাইন ট্রেডিং এবং পেমেন্ট সিস্টেম বাড়ছে, তাই বিবি লেনদেনের পরিমাণের সীমা বাড়িয়েছে।’
বর্তমানে দেশে ১৩টি ব্যাংক বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাইক্যাশ, শিওরক্যাশসহ বিভিন্ন নামে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ের শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ১৮ দশমিক ১১ কোটির বেশি।
তাদের মধ্যে, গ্রামে ১০ দশমিক ৭ কোটি গ্রাহক এবং শহরে ৮ দশমিক ৪ কোটি গ্রাহক রয়েছে। এছাড়াও নিবন্ধিত ১০ দশমিক ৪৩ কোটি পুরুষ এবং ৭ দশমিক ৬৪ কোটি নারী গ্রাহক রয়েছেন। ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা ১৫ দশমিক ২৬ লাখে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: মোবাইল ব্যাংকিং: সেন্ড মানি ফ্রিসহ সার্ভিস চার্জ কমানোর দাবি