বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে সিটি নির্বাচনে জনগণের কোনো আগ্রহ নেই।
বিএনপি কোনো প্রার্থী না দিলেও আগামী পাঁচ সিটি করপোরেশনে সাজানো নির্বাচন হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
রবিবার (২১ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির একটি অংশের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘তারা (সরকার) রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। দেশে নির্বাচন নিয়ে জনগণ আগ্রহী নয়।’
ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা (সরকার) ধ্বংস করে দিয়েছে। দেখেন আপনারা আজ নির্বাচনের অবস্থা কেমন? এই যে মেয়র ইলেকশন হচ্ছে, বেশির ভাগ সিটি করপোরেশনে বিরোধী দল কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: ‘স্বৈরাচারের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শ্রমিকদের প্রতি মির্জা ফখরুলের আহ্বান
তিনি বলেন, সিলেটে অত্যন্ত জনপ্রিয় মানুষ আরিফ (আরিফুল হক চৌধুরী) দুইবার মেয়র হয়েছেন এবং সিলেটের মানুষ তাকে আবারও মেয়র হিসেবে চায়। সেই আরিফ শনিবার জনসভা করে বলেছেন যে এ নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, নির্বাচনই হবে না। তারা ব্লু প্রিন্ট করে ফেলেছে। এ নির্বাচনে যাওয়ার অর্থই হয় না।
তিনি বলেন, সিলেট নগরীর জনগণ তাদের প্রিয় নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় চোখের পানি ফেলেছে। তিনি (আরিফ) স্পষ্টভাবে বলেছেন, এই নির্বাচন অর্থহীন হবে এবং এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
তিনি আরও বলেছেন, আমিও মনে করি এ নির্বাচন অর্থহীন হবে এবং এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, সব জায়গায় একই অবস্থা। আজ প্রতিটি নির্বাচনকে একই অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে।
তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী যারা, এ ধরনের ফ্যাসিবাদী যারা তাদের একটা হাতিয়ার। নির্বাচন একটা টুল, দেখাবে নির্বাচন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সুতরাং আমরা খুব পরিষ্কার, স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে বলছি যে এ সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন নিয়ে এমন একটা অবস্থা হয়েছে, তাদের যে জোট আছে, ১৪ দলের এক শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আমাদের অত্যন্ত সম্মানিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব রাশেদ খান মেনন, তিনি কিছুদিন আগে বলেছেন, পরিকল্পিত নির্বাচন চাই না। ম্যাসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার যে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত নির্বাচন করে, সেই নির্বাচন তিনি চান না।
আরেকজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে এখানে মন্ত্রীরাই সিন্ডিকেট তৈরি করে, তারাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। এসব আমার কথা নয়, সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন।
এছাড়া রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
আরও পড়ুন: দাবি একটাই, শেখ হাসিনার পদত্যাগ: মির্জা ফখরুল
‘খেলাপী ঋণ প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় আজ এসেছে যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তার রিপোর্টে বলছে বাংলাদেশ ইজ চ্যাম্পিয়ান অব ডিফল্ট লোনস, এই যে খেলাপি ঋণ, এটাতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ান হয়ে গেছে। এক নম্বরে শ্রীলঙ্কা ছিল, শ্রীলঙ্কাকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কেন হবে না? যারা ঋণ নেয়, শোধ করে না। তারা তো তাদের অ্যাডভাইজার মন্ত্রী, আমি নাম বলব না। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা ঋণ নিয়ে রিসিডিউল করছে বছরের পর বছর ধরে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, আর আমাদের ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা যদি একটা-দুইটা ডিফল্ট হয় তো তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যাচ্ছে, তাকে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই সরকারের অপকর্ম বলে শেষ করা যাবে না। এনাফ ইজ এনাফ। এই সরকার যদি একটা মুহূর্ত আর দেশের পরিচালনায় থাকে, দেশ আরও খারাপের দিকে যাবে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে কমিটমেন্টগুলো করেছিলো, জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি করেছিলো প্রত্যকটা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দল, আওয়ামী লীগ হচ্ছে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দল, আওয়ামী লীগ হচ্ছে স্বাধীনতার বিরুদ্ধের দল।
আরও পড়ুন: সরকার মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল
‘অনেক খেলা হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে অনেক খেলা হচ্ছে, খেলা হবে। এই যে, উনি (ওবায়দুল কাদের) তো প্রায় বলেন খেলা হবে। সেটা হবে। অনেক চেষ্টা হবে আমাদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি সৃষ্টি করানোর।
তিনি বলেন, যারা দেশপ্রেমিক আছেন তারা কখনো ভুল বুঝবেন না। আজকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য নিয়ে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্রের মুক্তি, বাংলাদেশের মুক্তি, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং একটা সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে আমরা এক ও অনঢ় হয়ে থাকব।
এছাড়া এই আন্দোলন আমাদের শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় যাওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে সর্বশক্তি দিয়ে নামতে হবে একাত্তর সালে যেভাবে আমরা নেমেছিলাম আজকেও একইভাবে আন্দোলনে নেমে শান্তিপূর্ণভাবে এই সরকারকে সরিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা আমাদেরকেই করতে হবে।
তিনি বলেন, এই কাজটা বাইর থেকে কেউ করে দেবে না। অনেকে অপেক্ষায় আছেন। অপেক্ষায় থাকার কোনো কারণ নাই। আপনাকে করতে হবে, আমাদের সবাইকে করতে হবে। এটা প্রত্যেকের দায়িত্ব বিশেষ করে তরুন সমাজের।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগের কি অবস্থা, তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। আপনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিচ্ছে, নিম্ন আদালতে গেলে সেই জামিন ক্যানসেল করে কারাগারে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।
আর গায়েবি মামলার কথা আমরা বলতে বলতে হয়রান হয়ে গেছি, আর বলতে ইচ্ছা করে না।
তিনি বলেন, খুলনাতে দেখেন একটা সভায় গিয়ে কিভাবে পুলিশ সেখানে আক্রমণ করেছে, ন্যাক্কারজনক। সেখানে অসংখ্য মানুষকে গুলিবিদ্ধ করেছে, আহত করেছে এবং হয়রানি করেছে।
এছাড়া এক হাজার ৩০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের