কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন,সারের কোন ঘাটতি নেই। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চাহিদার অতিরিক্ত সারের মজুদ রয়েছে। আমরা এখন আগামী বোরো মৌসুমের জন্য সার সংগ্রহ করছি। তারপরও কিছু ডিলার ও অসাধু ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে দাম বাড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশেও কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। সেটিকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার জন্য দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু ব্যবসায়ী অনেক চতুর। তারা আমনের উৎপাদন কমবে জেনে ইতোমধ্যে চাল মজুদ করছে। সেজন্য বাজারে চালের সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ধান ও গমসহ ২৮টি ফসলের ভবিষ্যত চাহিদা ও যোগান নিরূপণে পরিচালিত গবেষণার চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ভোগ্যপণ্যের দাম প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা স্বীকার করছি, মানুষ কষ্টে রয়েছে। যাদের আয় কম তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। তবে সরকার মানুষের কষ্ট লাঘবে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। কীভাবে দ্রুত সবকিছুর দাম কমানো যায় সে চেষ্টা সরকারের রয়েছে। তবে বিশ্ব পরিস্থিতি খুব খারাপ। সেজন্য বিশ্বজুড়েই এ অস্থিতিশীলতা।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমন চাল উৎপাদনের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৌসুম। খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে এবছর আমন রোপণ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বেশি। গ্রামগঞ্জে অনেক সময় বিদ্যুত থাকছে না। সেচ সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেরিতে লাগানো আমনের ক্ষেত এখন সেচের অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সেজন্য আমন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।
তিনি বলেন, গতকাল কেবিনেটে এ পরিস্থিতি নিয়ে অলোচনা হয়েছে। আমি বলেছি আগস্টের পরে ধান রোপণ করলে উৎপাদন কমে যাবে। আগামী ১৫ দিন আমনের সেচের কাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী সেটি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে রাতে সেচের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি, এ সিদ্ধান্ত তারা (বিদ্যুৎ বিভাগ) পালন করবে।
২৮টি ফসলের ভবিষ্যত চাহিদা ও যোগান নিয়ে স্টাডির প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন,এ ধরনের স্টাডি খুবই প্রয়োজন। সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে চাল ও গমসহ বিভিন্ন ফসলের চাহিদা ও উৎপাদনের পরিসংখ্যান থাকলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন করা সম্ভব হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সম্ভব হবে।
এসময় স্টাডিকে আরও সঠিক করার নির্দেশনা প্রদান করেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অধীনে দেশের বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষকের নেতৃত্বে নার্সভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের (কৃষি অর্থনীতিবিদ) সমন্বয়ে গঠিত গবেষণা দলের মাধ্যমে এ স্টাডি পরিচালিত হয়। ২০৩০ এবং ২০৫০ সালে ফসলের (খাদ্য শস্য) অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও যোগানের ঘাটতি/উদ্বৃত্ত প্রাক্কলন করতেই মূলত স্টাডিটি করা হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য গ্রহণের তালিকা ধীরে ধীরে বৈচিত্র্যময় হচ্ছে। দানাদার খাদ্য থেকে সিংহভাগ ক্যালোরি গ্রহণ করলেও মোট ক্যালোরি গ্রহণের হার অনেক কমে গেছে। ১৯৯০ সালে দানাদার খাদ্য থেকে মোট ক্যালোরি গ্রহণের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৬ শতাংশ যা ২০১০ সালে হ্রাস পেয়ে ৮৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।
১৯৯০ সালে শুধু চাল থেকে ক্যালরি গ্রহণের হার ছিলো ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ যা ২০২১ সালে হ্রাস পেয়ে ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে এবং আগামী ২০৩০ এবং ২০৫০ সালে হবে যথাক্রমে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৭০ দশমিক ৪ শতাংশ। গম থেকে ক্যালরি গ্রহণের হার ২০১০ সালে ছিলো ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০৩০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ যা অব্যাহত থেকে ২০৫০ সালে ৬ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছাবে।
পড়ুন: বিএনপি সরকারকে সরাতে পারবে না: কৃষিমন্ত্রী
চালের উৎপাদন ও যোগানে বিষয়ে বলা হয়, ২০৩০ সালে মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং অন্যান্য প্রয়োজনে (বীজ, প্রাণি ও মৎস্য খাদ্য, শিল্প, অপচয়, ইত্যাদি) চালের মোট চাহিদা হবে ৩৯ দশমিক ১ মিলিয়ন টন এবং ২০৫০ সালে ৪২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন। বর্তমান উৎপাদন অবস্থা বিদ্যমান থাকলে আগামী ২০৩০ ও ২০৫০ সাল নাগাদ চালের মোট যোগান হবে যথাক্রমে ৪৩ দশমিক ২ এবং ৫৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন টন।
আগামী কয়েক দশক দেশের কৃষি উৎপাদন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সেচের পানির অভাব ইত্যাদি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ধান উৎপাদন ব্যাপক ব্যাহত হবে। এটি মোকাবিলায় অধিক উৎপাদনশীল নতুন ধান প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় করা অত্যাবশ্যক- যাতে মোট উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা যায়। আশা করা যায়, দীর্ঘমেয়াদে নতুন ধান প্রযুক্তি পাওয়া যাবে এবং কৃষক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাভাবিক অবস্থা বিবেচনায় ২০৩০ ও ২০৫০ সালে উদ্বৃত্ত চালের পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৪ দশমিক ১ ও ১২ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতি (বিরূপ আবহাওয়া, উৎপাদন উপকরণ সংকট, ইত্যাদি) সৃষ্টি হলে ২০৩০ সালে ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন এবং ২০৫০ সালে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন টন চালের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার।
আরও পড়ুন: দেশে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সার মজুদ আছে: কৃষিমন্ত্রী
ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতেই দাম বৃদ্ধি: কৃষিমন্ত্রী