নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় ক্ষমতাসীন দলের অনেক প্রার্থীর সম্পদের যে ঘোষণা দেখানো হয়েছে তা আলাদিনের প্রদীপের গল্পের মতো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব আর্থিক বিবরণী সম্পর্কে সম্পূর্ণ নীরব, কারণ এটি কেবল বিরোধী দলের নেতা ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নিপীড়ন ও হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
বুধবার(১৩ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা-কর্মীদের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বিচারকের মাধ্যমে শাস্তি দিচ্ছে সরকার: রিজভী
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আসন্ন একদলীয় ও নাটকীয় নির্বাচনে তাদের (আওয়ামী লীগের) মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ডামি ও সুবিধাভোগী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হলফনামা আরবি রূপকথার বিখ্যাত আলাদিনের চেরাগের কথা মনে করিয়ে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন দলের অনেক প্রার্থী তাদের হলফনামায় বিদেশের উঁচু এলাকায় বাড়ি, গাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট দেখিয়েছেন এবং ডুপ্লেক্স সহ আরও অনেক কিছু তাদের হলফনামায় প্রমাণিত হয়েছে যে তারা স্বর্গে বাস করছেন।
রিজভী বলেন, ‘ভোট ডাকাতির মন্ত্রী এমপিরা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা গত ১৫ বছরে বিপুল সম্পদ ও নগদ অর্থ সংগ্রহ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের স্ত্রী, সন্তান ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনও অস্বাভাবিক ধনী হয়েছে।’
রিজভী বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও আওয়ামী ‘ফ্যাসিবাদী’ রাজনীতিবিদদের কোনো ক্ষতি নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী রাজনীতি এমন একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে যেখানে কোনো ঝুঁকি নেই, লোকসানের ঝুঁকি নেই। তারা যে ব্যবসাই করুক না কেন, তারা শুধু মুনাফা অর্জন করে। তাদের কেউই শেয়ার ব্যবসায় লোকসানের সম্মুখীন হননি। কৃষি ও মাছের ব্যবসায়ও তারা অনেক বার লাভবান হয়েছে। স্ত্রীরাও কোটি কোটি টাকা ও সম্পদ উপার্জন করে স্বামীর ব্যবসা রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন।’
রিজভী আরও বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আওয়ামী লীগের ম্যাজিক স্টিকের ছোঁয়ায় সম্পদের পাহাড় ও গাড়ির বহর গড়ে তুলেছেন। ১০ বছর আগে যেসব মন্ত্রীর বার্ষিক আয় এক লাখের নিচে ছিল, তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় এখনও তাদের মূল সম্পদের খুব কম সম্পদ দেখিয়েছেন। তারা তাদের হলফনামায় অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ, বিদেশে সেকেন্ড হোম এবং বিদেশে পাচার করা অর্থের কথা উল্লেখ করেননি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে তাদের লক্ষ্য লুটপাটের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা। হলফনামায় লুটেরাদের সামান্য সম্পদই বেরিয়ে এসেছে। সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও তাদের সম্পদের অনেক তথ্য গোপন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের বিষয়ে দুদক নীরব, কারণ তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করে। আওয়ামী লুটেরাদের সম্পদ দেখে তারা অন্ধ হয়ে যায়।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘দুদককে একটি দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে কারণ এর বর্তমান কাজ হচ্ছে বিএনপি নেতা ও ভিন্নমতাবলম্বীদের খুঁজে বের করা।’
তিনি দাবি করেন, বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা-কর্মীরা কারাগারে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন: রিজভী
বিএনপি নেতা রিজভীর সমাবেশ থেকে গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ পিকেটারদের