বিএনপি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি তথাকথিত বিরোধী দল মিথ্যা প্রচার করে জাতির সাফল্যকে ক্ষুণ্ন করতে চায়, কিন্তু তারা সফল হবে না।
তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এই স্বাধীনতাকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া উচিত নয়। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের একটি তথাকথিত বিরোধী দল রয়েছে, যারা মিথ্যা প্রচার করে এই স্বাধীনতার সাফল্যকে নষ্ট করতে চায়। কিন্তু তারা সফল হবে না, ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব।’
শনিবার নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে এক সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ জেলা শাখা ও নগর শাখার আয়োজনে আয়োজিত এ সমাবেশ কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে মানবসমুদ্রে পরিণত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহে সদ্য সমাপ্ত ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং আরও ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন, আরও ৩০টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রধানমন্ত্রীর
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন যে তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। ‘তাই এদেশের মানুষের ভাগ্য আমাদেরই গড়তে হবে। দারিদ্র্যের কবল থেকে তাদের মুক্ত করতে হবে, গৃহহীনদের ঘর দিতে হবে, তাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের উন্নত জীবন দিতে হবে এবং প্রতিটি বাড়িতে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘একজন বিএনপি নেতা আছেন সারাদিন মাইক লাগিয়ে বসে থাকেন। বাংলাদেশটাকে নাকি আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি।’
শনিবার তিনি মোট ১০৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহবাসীর কাছে জানতে চান, এগুলো কি ধ্বংসের উদাহরণ? ‘ তারা কেন (বিএনপি) এত মিথ্যা কথা বলে? মিথ্যা বলাটাই তাদের পেশা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হওয়ায় যে কেউ দূরে বসেও কথা বলতে ও রাজনীতি করতে পারছে।
তিনি বলেন, তার সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে এবং প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে।
যেহেতু তার সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলেছে, তাই তারা (বিএনপি নেতারা) মাইক্রোফোন দিয়ে এত কথা বলতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই তারা আমাদের তৈরি জিনিস ব্যবহার করে, আমাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। এটা তাদের স্বভাব। লুটপাট, চুরি ও দুর্নীতি তাদের অভ্যাস।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ‘আমাদের এই অর্জন বজায় রাখতে হবে। এই সাফল্য ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রী ২৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন শনিবার
তিনি আরও বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ, অর্থনীতি, কৃষি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হবে স্মার্ট। ‘বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তৃণমূল পর্যায়ে থেকেও উন্নত জীবন পাবে। প্রতিটি গ্রামবাসী শহুরে সুবিধা পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহকে একটি বিভাগের রূপ দিতে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তার সরকার ময়মনসিংহকে বিভাগে পরিণত করেছে।
তিনি আবারও দেশবাসীকে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা যাতে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে এমন ফসল ফলানোর আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও আবদুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ও ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মির্জা আজম ও আহমেদ হোসেন প্রমুখ।
সকাল থেকেই বর্ণাঢ্য ব্যানার-ফেস্টুন ও স্লোগানে স্লোগানে র্যালিতে ভিড় জমায় উৎসাহী মানুষ।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভার পর বর্ণিল গেট, ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে পুরো ময়মনসিংহ আনন্দের নগরীতে পরিণত হয়।
দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে সর্বশেষ তিনি একটি জনসভায় ভাষণ দিতে একই স্থানে এসেছিলেন।
আরও পড়ুন: আ.লীগ সরকারের অধীনে ১৪ বছরের উন্নয়নে ময়মনসিংহ যেভাবে বদলেছে