বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাবো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা যেভাবে টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে মানুষকে আস্থা ও ভরসা দিচ্ছেন এবং আশ্বস্ত করছেন আপনারাও সেই পথ অনুসরণ করুন। তাদের মতো আপনারাও সাহসী পদক্ষেপ নিন।’
তিনি বলেন, আপনারা আগে টিকা নিলে জনগণ ভরসা পাবে। এ টিকা নিতে সাহস পাবে গোটা দেশবাসী। টিকা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা কাটাতে সহায়ক হবে। অনাগ্রহ কাটিয়ে দেশবাসীকে টিকা নিতে আগ্রহী করে তুলবে।
আরও পড়ুন: বিএনপি সবকিছুতেই লুটপাটের সাথে যুক্ত ছিল: হাছান মাহমুদ
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপির এ নেতা।
রিজভী বলেন, করোনার টিকা সরকারি মন্ত্রী, এমপিদের বাদ দিয়ে যখন সাধারণ মানুষকে দেয়ার কথা বলা হয় তখন দেশের মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, যারা দেশের নেতৃত্বস্থানে রয়েছেন তাদের থেকে এই টিকাদান শুরু হলে মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আস্থা পাবে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকা নিলে মানুষ ভরসা পাবে। জনগণ উপলব্ধি করবে আপনারা দেশের মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। জনগণকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসেন।’
আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশন সরকারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে: বিএনপি
তিনি বলেন, ‘তাদের দল আশা করে প্রথম টিকাটি প্রধানমন্ত্রীর নেয়ার দৃশ্য সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে।’
‘আর যদি প্রথমবার টিকা না নেন, তাহলে জনগণ নিশ্চিত হবে আপনাদের সবকিছুই ভণ্ডামি ও ছলচাতুরী। জনগণকে কোনো দেশের পরীক্ষাগারের গিনিপিগ বানাতে চাচ্ছেন। গরীব সাধারণ আমজনতাকে আগে ভ্যাকসিন দিয়ে দেখবেন ওরা মরে না বাঁচে,’ বলেন রিজভী।
বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের সৌজন্যে বাংলাদেশে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানো হয়েছে। দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) থেকে ভ্যাকসিনের তিন কোটির ডোজ কিনছে বাংলাদেশ এবং ৫০ লাখ শটের প্রথম চালান আগামী ২৫ জানুয়ারি ঢাকায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিএনপিকে আগে ভ্যাকসিন দিতে অনুরোধ করবেন হাছান মাহমুদ
রিজভী বলেন, ভারতের পাঠানো ভ্যাকসিনটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি নাকি ভারত বায়োটেকের উদ্ভাবিত টিকা এ নিয়েও জনমনে গভীর সন্দেহ-সংশয় রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যতদূর জানি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত ভারত তাদের দেশে দুই ধরনের টিকা অনুমোদন দিয়েছে। একটি হচ্ছে বৃটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার মিলিত গবেষণায় তৈরি টিকা ‘কোভিশিল্ড’। অপরটি হচ্ছে ভারত-বায়োটেকের উদ্ভাবিত টিকা 'কোভ্যাক্সিন'। এই দুটি টিকাই উৎপাদন করছে ভারতের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট। তবে ভারত সরকার বাংলাদেশে কোনটি পাঠিয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ভারতে টিকা নেয়ার পর চারদিনে তিনজন মারা গেছেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৬০০ জন। দেশটির চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিতর্কিত কোভ্যাক্সিন টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকদের বড় অংশ।
আরও পড়ুন: টিকা উপহার শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির দৃঢ় সম্পর্কের নিদর্শন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘সরকারের প্রতি আস্থার অভাবের কারণেই মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে কোনো কোনো মন্ত্রী যখন বলেন, বিএনপি চাইলে করোনার টিকা তাদেরকে সবার আগে দেয়া হবে, তখন এই টিকার প্রতি মানুষ গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়। টিকা প্রসঙ্গে সরকারি মন্ত্রীদের বক্তব্য সতীনের ছেলেকে বাঘ মারতে পাঠানোর মতো।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের মন্তব্য ও করোনা শনাক্ত-পরীক্ষা-চিকিৎসা নিয়ে কেলেঙ্কারির পর করোনা নিয়ে নানা তেলেসমাতির কারণে টিকা গ্রহণের ব্যাপারেও মানুষের মনে সংশয় রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের প্রতি আস্থার অভাবের কারণেই মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। করোনার টিকা সরকারি মন্ত্রী, এমপিরা আগে পাবেন এমন ব্যবস্থা করা হয়নি তখন দেশের মানুষ কনফিউজড হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: টিকা নিয়ে গুজব ছড়ানো, রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকুন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী