গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সরকারকে যোগ্য জবাব দিতে শুক্রবার ঢাকা মহানগরবাসীকে গোলাপবাগ মাঠে তাদের দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অন্য নয়টি বিভাগীয় শহরের মতো আমরা ঢাকায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব। আমরা সর্বস্তরের জনগণকে আমাদের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাই।’
শুক্রবার বিকাল ৩টায় দলের চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বাবুগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণ: বিএনপির ২০৫ নেতাকর্মীর নামে মামলা
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, শনিবারের সমাবেশের জন্য দলকে অনুমতি দেয়া নিয়ে সরকার অহেতুক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং কর্মসূচি বানচালের অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে সময় নষ্ট করে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, সরকার বুধবার নয়াপল্টনে সহিংসতা করেছে, দলের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে, অনেককে আহত করেছে যাতে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা সমাবেশে যোগ দিতে না পারে।
তিনি বলেন, ‘শনিবারের সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়ে জনগণ সরকারের অপচেষ্টার যোগ্য জবাব দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
মোশাররফ বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ইতোমধ্যে সমাবেশস্থল ব্যবহারের অনুমতি দেয়ায় আগামীকাল সকাল ১১টা থেকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ শুরু করবে দলটি।
মির্জা ফখরুল, আব্বাসের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে রাতেই গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।
তিনি বলেন, ‘ফখরুল ও আব্বাসের গ্রেপ্তার সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের চরম বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি সরকারের কাছে অবিলম্বে দুই শীর্ষ নেতাসহ গ্রেপ্তার হওয়া দলের অন্য সব নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গোলাপবাগে দলটিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এ জেড এম জাহিদ বলেন, ডিবি প্রধান প্রতিনিধি দলকে অনুষ্ঠানস্থলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন এবং গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের প্রস্তুতি নিতে বলেন।
শুক্রবার ভোরে বিএনপি দাবি করে, ঢাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ ফখরুল ও আব্বাসকে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ছয় ঘণ্টা বৈঠক করে যেখানে শনিবার (১০ ডিসেম্বর) কমলাপুর স্টেডিয়াম বা মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠে সমাবেশ করার বিষয়ে কথা হয়।
পরে বিএনপির কয়েকজন নেতাকে নিয়ে আব্বাস দুটি স্থান পরিদর্শন করেন।
ওই বৈঠকে পুলিশ কর্তৃপক্ষ নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয় পুনরায় খোলার আশ্বাস দিলেও শুক্রবার সকাল থেকে এলাকাটি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
বুধবার ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের আগে দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা নিহত ও প্রায় ৫০ জন আহত হন।
সংঘর্ষের পর পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে দলের প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে।
চলমান আন্দোলনের গতি অব্যাহত রাখার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিএনপি ২৭ সেপ্টেম্বর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের অভিযানে ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও যশোরে দলের পাঁচ নেতাকর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে ১০ গুরুত্বপূর্ণ শহরে ধারাবাহিক সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও পরিবহন ধর্মঘট উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে সমাবেশের আয়োজন করেছে দলটি।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে আগামী জাতীয় নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নয়, বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে। কিন্তু সংবিধান তা হতে দেয় না উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের দিনটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস।
আরও পড়ুন: অবশেষে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ হচ্ছে গোলাপবাগ মাঠে