আগুন-জঙ্গি হামলার জন্য বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি বাংলাদেশের জন্য আজরাইল হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘যারা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের ক্ষমা করা যায় না। তাদের অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবে অংশ নিয়ে এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
এ সময় তার বক্তব্যে ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০২৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতা ও অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা প্রদর্শন করা হয়।
তিনি বলেন, বিএনপি দিনের পর দিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসে এখনও অনেকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী রাজনৈতিকভাবে গ্রেপ্তার- এই অভিযোগের বিষয়ে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কারা রাজবন্দী (রাজবন্দী) হিসেবে পরিচিত এবং যারা আগুন জ্বালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে তারা কীভাবে রাজনৈতিক বন্দী হতে পারে। বরং তারা সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও অপরাধী।
আরও পড়ুন: রমজানে পণ্যের অবৈধ মজুদ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে: ডিসিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। যারা গ্রেপ্তার রয়েছেন তারা হয় হুকুমদাতা, সরাসরি ঘটনার সঙ্গে জড়িত বা অর্থদাতা। সুতরাং অর্থদাতা, হুকুমদাতা বা যারা সরাসরি জড়িত তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় দায়ের করা মামলার সাক্ষী ও নথি দ্রুত নিষ্পত্তি এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ইসরায়েল শিশু ও নারীদের হত্যা করছে। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনে ইসরায়েল যা করছে, বিএনপির চরিত্র এখানে তেমনই। বিএনপি বাংলাদেশের জন্য আজরাইল হয়ে গেছে।’
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত চলতি সংসদের প্রথম অধিবেশন গত ৩০ জানুয়ারি শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে-বিদেশে অভিযোগ করে কোনো লাভ হবে না। আর বিদেশিরা যা বলবে তাতে দেশ চলবে না। আমরা সব দেশের নির্বাচন দেখেছি।’
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক নারী ও নতুন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'অতীতে এ ধরনের সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি।’
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার সাধারণ নির্বাচনের আগে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করবে।
আসন্ন জাতীয় বাজেটে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে- আমাদের পাঁচ বছরের মেয়াদে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন করব।’
নতুন মন্ত্রিসভা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার দেশের কল্যাণে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে এবং চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে এসব পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখবে, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে, সঠিক ব্যক্তিরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী হবে তা নিশ্চিত করবে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, সরকারি চাকরিতে শূন্য পদে নিয়োগ, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, নতুন পণ্য উৎপাদন, বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নতুন রপ্তানি বাজার অনুসন্ধান করবে। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও শিল্পের উন্নয়নে উৎসাহিত করা এবং চামড়া, পাটজাত পণ্য ও অন্যান্য পণ্যের সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা নিশ্চিত করা, যা এখন তৈরি পোশাক খাত উপভোগ করছে।
আরও পড়ুন: মুসলিম দেশগুলোকে অভিন্ন মুদ্রা চালুর পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর