বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার সত্যকে আড়াল করতে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে মিথ্যাচার করছে এবং ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে।
সোমবার (২৯ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সহিংসতায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করার পরিবর্তে সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দমন করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচারে লিপ্ত হচ্ছে। এর সর্বশেষ প্রমাণ হলো, রংপুরে আবু সাঈদ গুলিতে নয়, বরং ইটের আঘাতে মারা গেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। যদিও দেশ-বিদেশের মানুষ দেখেছে কীভাবে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সহিংসতার সম্পূর্ণ দায় সরকারকে নিতে হবে এবং জনগণের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার এ ধরনের মিথ্যাচার করে এবং প্রতারণামূলক কৌশল ও নির্যাতন করে জনগণের কাছ থেকে সত্য গোপন করতে পারবে না।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে: মির্জা ফখরুল
ফখরুল আরও দাবি করেন, সরকার ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যার যে তালিকা দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ গণমাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনেক বেশি।
এছাড়া নিহত কিশোর এবং এর আগে নিহতদের নাম সরকারের তালিকায় নেই বলেও জানান তিনি।
অবিলম্বে হতাহতের সুষ্ঠু তালিকা প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন 'অনির্বাচিত ও অবৈধ' আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে।
ফখরুল দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলন দমনের নামে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসের কারণে কয়েকশ ছাত্র ও নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ‘যারা নিহত বা আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের ছোঁড়া বুলেটে বিদ্ধ হয়েছেন।’
তিনি বলেন, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজধানীর ৩১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে ‘জাতীয় ঐক্যের’ আন্দোলন শুরু বিএনপির
তিনি বলেন, 'আহতদের পরিবার ও সাধারণ মানুষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমনকি সরকারের নির্দেশে নিহতদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতদের স্বজনরা। বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে অনেক নিহত মানুষকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা বারবার বলছেন, প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করবেন। ‘কিন্তু বাস্তবতা হলো- প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করার পরিবর্তে সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের দমনে মনোযোগী হয়েছে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ বিরোধী দলের নেতাদের রিমান্ডে নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী এবং কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে নিয়ে গেলেও এখনো তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর মায়াকান্না জনগণের সঙ্গে প্রতারণার আরেকটি নজির: ফখরুল