প্রথম থেকেই বয়স্কদের উপর কোভিড-১৯ সংক্রমণের সম্ভাবনার হার বেড়েছে বিধায় করোনাকালীন বয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে বেশি জোর দেয়া দরকার। বয়স সাধারণত ৫০ এর কোঠায় থাকার সময় করোনা ঝুঁকি শুরু হয়ে ৬০, ৭০ এবং ৮০ এর দশকে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। চলুন জেনে নিই, আপনার প্রিয় বায়োজ্যেষ্ঠকে কিভাবে আপনি করোনা মহামারি থেকে নিরাপদে রাখবেন।
করোনাকালীন বয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায়গুলো
শারীরিক অবস্থার প্রতি সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখুন
সাধারণত পঞ্চাষোর্ধদের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা থাকায় এসময় থেকে তারা ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করেন। স্বাভাবিকভাবেই সেই জটিলতা নিরসনে ডাক্তার দেখানো, সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, সময় মতো ওষুধ খাওয়া, ব্যায়াম ইত্যাদি সব মিলিয়ে একটা নির্দিষ্ট রুটিনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
এই নিয়মগুলো ঠিকভাবে বজায় রাখতে তাকে সাহায্য করুন। বিশেষ করে এই সময়ে যে কোনও জটিলতা বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। তাই উপসর্গ দেখামাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন। তার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করুন। নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার সময়টা মনে করিয়ে দিন। দিন শেষে একটি সুন্দর ঘুম হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন।
আরও পড়ুন: কঠোর ডায়েটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ জেনে নিন
জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাবার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন
বায়োজ্যেষ্ঠদের প্রায়ই ডাক্তারদের সাথে দেখা করার রুটিন থাকে। এই করোনা মহামারির সময় খুব বেশি প্রয়োজন না থাকলে তাদেরকে নিয়ে বাইরে বেরবার দরকার নেই। পারিবারিক ডাক্তার থাকলে বাসায় এসেই দেখতে পারবেন, কিন্তু না থাকলে চেষ্টা করুন ডাক্তারের সাথে জরুরি আলাপ ফোনেই সেরে ফেলতে।
প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ফোন করে ডেলিভারি নিন। নিতান্তই কোনও টেস্ট করাতেই হলে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার নিয়ে বের হন। হাসপাতালে সরবহাকৃত আলাদা সুরক্ষা ড্রেস ব্যবহার করুন। হাঁচি-কাশি অথবা ঘাম মুছার ক্ষেত্রে সাথে পরিষ্কার টিশ্যু রাখুন। দুর্বলতার কারণে আপনাকেও যেহেতু সাথে সাথে থাকতে হচ্ছে তাই একই স্বাস্থ্যবিধি আপনাকেও অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সহায়তা করুন
খাবারের আগে ও পরে অন্তত ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, কনুইয়ে মুখ গুঁজে হাঁচি-কাশি দেয়া ইত্যাদি প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি পালনে আপনার বায়োজ্যেষ্ঠকে সাহায্য করুন। সামাজিক দূরত্ব পালনের ব্যাপারটি ভালো করে বুঝিয়ে বলুন। পরিবারে কারো করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তাদের থেকে বয়স্কদের দূরে রাখুন। ঠিক একই ব্যাপার বয়স্কদের ক্ষেত্রেও মেনে চলুন। এ অবস্থায় অবশ্যই তার নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ সরবরাহ বজায় রাখবেন। যেহেতু এখনও সারা দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসেনি তাই ভ্যাকসিন নেয়ার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আবশ্যক।
আরও পড়ুন: বর্ষা মৌসুমে যেসব পুষ্টিকর সবজি খেতে পারেন
ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও জায়গা স্যানিটাইজ করুন
যে কোনও খাবার গ্রহণের আগে ও পরে খাবারের জায়গাগুলো ভালো করে পরিষ্কার করে দিন এবং সেই খাবারগুলোও পরিষ্কার করে দিন। তার ব্যবহৃত কাপড়, চেয়ার-টেবিল, লাঠি, বিছানা, ওষুধপত্র রাখার জায়গা ইত্যাদি পরিষ্কার করুন। পরিষ্কারের পর অবশ্যই আপনার পরনের কাপড় ধুয়ে ফেলুন এবং গোসল করে নিন। তার ঘরের মেঝে পরিষ্কার রেখে তাকে প্রতিদিন ব্যায়াম করার সুযোগ করে দিন। চশমা ও লাঠির পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্যানিটাইজার এবং মাস্ক বহন করতে উৎসাহিত করুন।
যোগাযোগের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করুন
করোনাকালীন আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্যবহারে সাহায্য করুন। সাধারণত বয়োজ্যেষ্ঠরা প্রযুক্তি ব্যবহারে একটু কম অভ্যস্ত হন। অনেকে ব্যবহারও করতে চান না। তাদেরকে সহজভাবে স্মার্টফোনে ম্যাসেজ দেয়া, ভিডিও কল করা শিখিয়েন দিন। চেষ্টা করুন অনলাইন সামাজিক মাধ্যমগুলো সহজে ব্যবহার করা শেখানো। এতে তার সময়গুলো ভালো কাটবে। আর আপনিও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবসময় তার সাথে একটা নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখতে পারবেন।
আরও পড়ুন: বর্ষাকালে ভ্রমণের পূর্বে কিছু সতর্কতা
শেষ কথা
সর্বোপরি করোনাকালীন বয়স্কদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পথ্যসেবা চালিয়ে যেতে হবে আরো সতর্ক হয়ে। খেয়াল রাখবেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যেয়ে যেন তাকে সামাজিকভাবে পৃথক করে দেয়া না হয়। শারীরিক যত্নের পাশাপাশি প্রিয়জনদের নিয়ে একসাথে থাকাটাও এই মহামারির সময়ে তাদের মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকার শক্তি যোগাবে।