চুয়াডাঙ্গায় তারকব্রহ্ম মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের পঞ্চম দিনে মানুষের ঢল নেমেছে। জমে উঠেছে অষ্টকালীন লীলা কীর্তন।

টানা পাঁচ দিন ধরে চলছে মহানাম সংকীর্তন। প্রতি তিন ঘণ্টা অর্থাৎ এক প্রহর পরপর ভারতসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৯টি সম্প্রদায় পালাক্রমে অখণ্ড মহানামযজ্ঞের সংকীর্তন পরিবেশন করছে।

বার্ষিক এ উৎসবকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পান্না (রূপছায়া) সিনেমা হল প্রাঙ্গণের বিশাল এলাকাজুড়ে দেশি-বিদেশি গৃহস্থালি ও মনোহরি সামগ্রীর পসরাও সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। পাশাপাশি নানা রকম মিষ্টির সঙ্গে তেলে ভাজা লোভনীয় সব খাবারও এখানে পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ভক্ত-অনুরাগী ও পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত  মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও অষ্টকালীন লীলা কীর্তন।

আয়োজকরা জানান, বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) মহানাম সংকীর্তনের পঞ্চম দিনে সকাল থেকেই ঢল নামে মানুষের। দেশের অন্যতম বড় এই মহানামযজ্ঞ ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুস্টিয়াসহ সারাদেশ থেকেই এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আসছেন। একদিকে চলছে রান্না, অন্যদিকে চলছে ২৪ ঘণ্টা খাওয়া দাওয়া (প্রসাদ বিতরণ)। গত চার দিনে প্রায় দেড় লাখ মানুষ এখানে এসেছে। প্রতিদিন গড় উপস্থিতি ৪০ হাজারের মতো।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমারসহ চুয়াডাঙ্গার আগরওয়ালা পরিবারের আয়োজনে এ নামযজ্ঞ চলছে। যা চলবে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) পর্যন্ত।

এ ছাড়া সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বাস-ট্রাক, মাইক্রো-প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ। মহানাম সংকীর্তনের পাশাপাশি উন্মুক্ত ভক্তসেবা বা প্রসাদ (খাবার) বিতরণ কার্যক্রমেও বেশ ব্যস্ত দেখা যায় নোঙরখানার রাধুনী ও সেবকদের।

আরও পড়ুন: কাল থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী লালন সাঁই’র তিরোধান উৎসব সাধুর হাট

এসপি,ডিসি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক, বিভিন্ন পর্যায়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতারাও যজ্ঞস্থল পরিদর্শনে আসছেন এবং আতিথেয়তা গ্রহণ করছেন।

আয়োজক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে অনুষ্ঠানটি সার্থক করে তোলার জন্য সব স্তরের মানুষের কাছে আমরা সহযোগিতার চেয়েছিলাম। যেটা পেয়েছি। এজন্য চুয়াডাঙ্গাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এবারের মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও অষ্টকালীন লীলা কীর্তন থেকে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার ম্যাসেজ সবাই পেয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনসহ হাজার হাজার মানুষ এখানে আসছে। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।

উল্লেখ্য, গত রবিবার থেকে শুরু হয় ১২তম বার্ষিক ২৪ প্রহরব্যাপী অখণ্ড শ্রী শ্রী তারকব্রহ্ম হরিনাম সংর্কীতন ও ৮ প্রহর ব্যাপী অষ্টকালীন লীলা কীর্তন। ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায় মাথাভাঙ্গা নদী থেকে ঘটে জল নিয়ে শুভ অধিবাসের শুরু হয়। যা আগামীকাল শুক্রবার শেষ দিনে ভোগ আরতি ও প্রসাদ বিতরণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।

আরও পড়ুন: নওগাঁয় শাস্ত্রীয় ও আদিবাসী নৃত্য উৎসব