স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম। দেশ স্বাধীনের আগে থেকে সংগীত নিয়ে কাজ করে চলেছেন সুজেয় শ্যাম। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্য তার সুরকরা গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’, ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি, বাংলাদেশের নাম’, ‘ওরে আয়রে তোরা শোন’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘রক্ত চাই, রক্ত চাই’।
গত বছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকদিন ঘরবন্দি সময় কেটেছে তার। তবুও থেমে থাকেনি তার সৃষ্টি। চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে পাঁচটি গান প্রকাশ করেছেন তিনি। বর্তমানে তার ব্যস্ততা বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে। সেসব প্রসঙ্গের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ইউএনবির সঙ্গে।
প্রতিবছর বিজয় দিবস এলে আপনার ব্যস্ততা অনেকটা বেড়ে যায়। এবার কোন কোন বিশেষ আয়োজনে আপনাকে পাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, ব্যস্ততা তো খানিকটা বেড়ে যায়। গত বছর করোনার জন্য অনেক আয়োজন সম্ভব হয়নি। তবে এবারের চিত্রটা পাল্টেছে। বড় পরিসরে একাধিক অনুষ্ঠান হবে। আমিও বেশ কয়েকটিতে থাকবে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৬ ডিসেম্বর সংসদ ভবনের আয়োজনটি। এছাড়া টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের বেশ কয়েকটি শোতে থাকব।
আরও পড়ুন: ঢাকার দর্শকদের মুগ্ধ করেছে সুফি সঙ্গীত
মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার মতো কণ্ঠযোদ্ধাদের যেমন প্রতিবাদের মাধ্যম ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের গান দিয়ে জাগ্রত করেছেন আপনারা। সেই সময় আপনার ভূমিকার কথাগুলো জানাতে চাই।
গান সব সময় শক্তিশালী মাধ্যম। এর মধ্য দিয়ে মানুষকে যেমন বিনোদন দেয়া যায়, তেমনি এটি প্রতিবাদের হাতিয়ার। পৃথিবীর অনেক সংগ্রাম ও প্রতিবাদের গানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রেও তেমন। কণ্ঠ দিয়ে আমরা যেমন প্রতিবাদ করেছি তেমনি একটি স্বাধীন দেশের জন্য বিজয়ের স্বপ্ন বুনেছি। এজন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালকসহ সবাই দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রর জন্য আমার প্রথম গান ছিল কবি দেলওয়ারের ‘আয়রে চাষি মজুর’। পরবর্তীতে আরও ৮টি গান করেছি। সুর ও সংগীতায়োজনের মধ্য দিয়ে আশার মশাল জ্বালানোর আহ্বান জানিয়েছি। একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে হয়।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানও যুক্ত। নতুন প্রজন্মের কাছে গানগুলো কতটা পৌঁছেছে মনে করেন?
দেশ গঠন সম্পর্কে জানতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিকল্প নেই। সেটি তরুণ প্রজন্মসহ সবার জন্যই। সেই সময়ের অবস্থা, দুঃখ বা আনন্দ সবকিছুই স্বাধীন বাংলার গানে প্রকাশ হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছেও স্বাধীন বাংলা বেতারের গানের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তরুণ যারা গান করছেন তাদের কণ্ঠেও গানগুলো শোনা যায় মাঝে মাঝে। তবে সেই প্রসার আরও হওয়া প্রয়োজন মনে করি। এনটিভির জন্য একটি রিয়্যালিটি শোতে দুই দিনব্যাপী স্বাধীন বাংলার গান নিয়ে একটি আয়োজন ছিল। যেগুলো তখনকার প্রতিযোগিরা গেয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই গানগুলো নিয়ে অ্যালবাম বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আর হয়নি। আমার একটা ইচ্ছার কথা বলি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হোক। যদিও মাঝে একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠান একটি উদ্যোগ নিয়ে দুটি অ্যালবাম রিলিজ করেছিল। কিন্তু সেখানে যারা গেয়েছেন এর মান নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।
আরও পড়ুন: পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রথম বাংলাদেশ কউচার উইক
‘পিস রানার অ্যাওয়ার্ড' পেলেন বিশ্বজয়ী বাংলাদেশি পর্যটক নাজমুন নাহার
এখন অন্যান কী কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
শরীরের জন্য তো আগের মতো নিয়মিত কাজ করতে পারি না। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর শেখ হাসিনাকে নিয়ে ৫টি গান করেছিলাম। সেটি বেশ বড় আয়োজন ছিল। এখন বাংলাদেশ টেলিভিশনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করছি। এরইমধ্যে চারটি পর্ব প্রচার হয়েছে।
অনেক সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে আপনাকে পাওয়া গেছে। তবে এখন বিরতিতে আছেন। সামনে কাজ ও এখন প্লেব্যাকের অবস্থা নিয়ে কিছু বলুন।
একবারে যে বিরতি নিয়েছি এমনটা নয়। গত বছর নার্গিস আক্তার পরিচালিত ‘যৈবতী কন্যা মন’ সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছি। যদিও এখন পর্যন্ত তা মুক্তি পায়নি। আর এখন তো আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেককিছুতেই সংকট। সিনেমার গানের যেই জনপ্রিয়তা এক সময় ছিল, সেটিও কমেছে। প্রযুক্তর উন্নতি হয়েছে কিন্তু আবেগ হয়তো কমে যাচ্ছে। তবে এর মধ্যেও ভালো কাজ হচ্ছে। অনেক চেষ্টা প্রশংসা করার মতো।