ভোরে পিরোজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম ডুমরিতলা এলাকায় তার বাড়িটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে জানান পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার আবু জাফর।
তার মৃতদেহ সামরিক জিপের পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তা দিয়ে টেনে ঢাকা সেনানিবাসে নেয়া হয়। তার প্রিয়জনেরা এখনো লাশের সন্ধান পাননি।
তিনি জানান, আগুন লাগার পরে প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে যায়।
শহীদ লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের ছোট ভাই মাহামুদুর রহমান টুনু বলেন, ফজরের নামাজের পরে আমরা হাঁটতে বের হই। সে সময় রাস্তায় বসে খবর পাই বাড়িতে আগুন লেগেছে। পরে আমরা দমকল বাহিনীকে খবর দেই এবং স্থানীয়রা আগুন নেভাতে চেষ্টা করে। দমকল বাহিনীর সদস্যরা এসে অনেক চেষ্টা করে আগুন নেভায়। কিন্তু ততক্ষণে আগুনে সব পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে শহীদ লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের জন্মস্থান এই বাড়িটি। এই বাড়িটিও পুড়ে গেল। যেভাবেই পুড়ুক আমি ছোট ভাই হিসেবে দাবি করছি আমার এই ভাইটার স্মৃতি যেন কোনোদিন মলিন না হয়।’
স্থানীয় পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুহা. নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি। শহীদ লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মৃতিবিজড়িত শতবর্ষী বাড়িটি যাতে আবারো সুন্দরভাবে পুনর্নির্মাণ করাসহ একটি স্মৃতি যাদুঘর তৈরি করা হয় তার জন্য আমি সরকারের কাছে দাবি করছি।’
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আবু জাফর জানান, স্থানীয়রা আগুন লাগার খবর দিলে তারা ৩টি গাড়ির মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘরে কেউ না থাকায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে আগুন লাগতে পারে। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানানো হবে।
আরও পড়ুন: আসামি ধরতে গিয়ে হামলায় পিরোজপুরে পুলিশের ৫ সদস্য আহত
পিরোজপুরে শিক্ষক হত্যায় ৩ জনের ফাঁসি
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের আগরতলা মামলার ২নং আসামি লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভোরে ৩২ পাঞ্জাবের কর্নেল তাজের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা তার ৩৬ এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার মৃতদেহ সামরিক জিপের পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তা দিয়ে টেনে ঢাকা সেনানিবাসে নেয়া হয়। তার প্রিয়জনেরা এখনো লাশের সন্ধান পাননি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগের অনন্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে তাকে ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুন: পিরোজপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে যৌতুকলোভী স্বামীর মৃত্যুদণ্ড