সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-১ জিয়াদুর রহমানের আদালতে শুক্রবার বিকাল ও রাতে ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন তারা। এর আগে তারা রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও ঘটনার কথা স্বীকার করেন।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রথম দিকে তারা একে অন্যের ওপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত ছিলেন। শুরুতে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলেও অবশেষে তারা দায় স্বীকার করেন।
সূত্র জানায়, আদালতে প্রথমে নিজের দোষ স্বীকার করেন মামলার চতুর্থ আসামি অর্জুন। তিনি জানান, বাইরে থেকে ওই তরুণীকে ছাত্রাবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভেতরে স্বামীকে আটকে রেখে গাড়িতেই তাকে ধর্ষণ করা হয়।
অর্জুনের পর জবানবন্দি দেন মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান। তিনি ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেন তবে, মূলহোতা হিসেবে রাজন আহমদ, আইনুদ্দিন ও তারেকুল ইসলাম তারেকের নাম জানান।
সর্বশেষ রবিউলও একইভাবে ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেন বলে আদালত পুলিশ জানিয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য ভূষণ চৌধুরী বলেন, ‘তিন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা ধর্ষণের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।’
আদালতে জবানবন্দি গ্রহণ শেষে রাতে তিন আসামিকে সিলেট কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।
এর আগে শুক্রবার বিকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির করে শাহপরাণ থানা পুলিশ। এ সময় তারা আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে একে একে তিনজনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের ঘটনার পরপরই সিলেট ছাড়েন আসামিরা। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর ২৭ সেপ্টেম্বর ভোরে ভারত পালিয়ে যাওয়ার পথে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাইফুরকে। একই সময় হবিগঞ্জের মনতলা সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অর্জুনকে। আর একই দিন রাতে হবিগঞ্জের ইনাতগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রবিউলকে।
তিনজনকে ২৮ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এদিকে, মামলায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন আসামি রাজন ও আইনুদ্দিন এবং এজাহারভুক্ত আসামি মুহিবুর রহমান রনি, তারেক ও মাহফুজুর রহমান মাসুম এখনও রিমান্ডে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজে স্বামীর সাথে বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে ধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় কলেজের ছাত্রাবাসে তার স্বামীকে বেঁধে রাখা হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে পরের দিন শাহপরাণ থানায় মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। পুলিশ এ পর্যন্ত আট আসামিকে গ্রেপ্তার এবং তাদের প্রত্যেককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।