কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সিংহী (নদী) আর বেঁচে নেই। শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সকাল ৬টার দিকে পার্কের সিংহের বেষ্টনীতে নদী মারা যায়।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্তকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি জিডি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্মকর্তা মো.মাজহারুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হীরার ঘরে জন্ম নেয় সিংহী (নদী)। দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর খুব ভালোভাবেই দিন পার করছিল এটি। এসময়ের মধ্যে নদী (সিংহী) ও সম্রাটের (সিংহ) ঘরে বাচ্চাও জন্ম নিয়েছে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি তাদের নির্ধারিত বেষ্টনিতে সম্রাট (সিংহ) ও নদী (সিংহী) খেলা করছিল। খেলতে খেলতে তাদের মধ্যে মারামারি লেগে যায়। এতে সম্রাট ও নদী আঘাত প্রাপ্ত হয়। তাদের মধ্যে সম্রাট (সিংহ) খুব আঘাত প্রাপ্ত হয়। ওই সময় সাফারি পার্কে কোন ভেটেরেনারী চিকিৎসক না থাকায় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.সুপন নন্দীর চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠে সম্রাট ও নদী। পরে তাদের আবারও তাদের বেষ্টনীতে রাখা হয়।
পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি সম্রাট ও নদী মিলনের সময় আবারও মারামারিতে জড়িয়ে পড়লে উভয়েই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এসময় সম্রাটের নখের আচড়ে নদীর গলায় জখম হয়। পরে সাফারি পার্কের ভেটেরেনারী সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের পরামর্শে ভার্চুয়ালি চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এই চিকিৎসায় সম্রাট সুস্থ হয়ে উঠলেও গলার ক্ষতস্থান থেকে পানি ঝরতে থাকে নদীর।
পড়ুন: ভোলায় বিপন্ন প্রজাতির বনবিড়াল উদ্ধার
নদীর গলার পানি ঝরা না কমায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বর্তমান ভেটেরেনারী চিকিৎসক ডা. হাতেম সাজ্জাত জুলকার নাইন গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসা প্রদান করেন। তারপরও নদীর কোন অগ্রগতি না হওয়ায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম ভেটেরেনারী ও এনিমেল সাইয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.সুপন নন্দী এবং পার্কে চিকিৎসকসহ পাঁচ সদস্যসের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপরও নদীর (সিংহী) কোন অগ্রগতি হয়নি। উপরন্তু দিন দিন আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে নদী (সিংহী)। এক পর্যায়ে খাবার গ্রহণও বন্ধ করে দেয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.সুপন নন্দী বলেন, সিংহীর গলায় যে আঘাত ছিল তা শুকিয়ে গিয়েছিল। মূলত এর বয়স শেষের দিকে। একটা সিংহী বাঁচে ১২ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। এই সিংহী এখন বার্ধক্য অবস্থায় পৌঁছে গেছে। যার কারণে তার রুচি চলে যাচ্ছে। শরীরের এন্টিবডি কমে গেছে। সে যখন খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে তাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন স্যালাইনও দেয়া হয়েছিল। নদীকে বাঁচাতে সব ধরনের চেষ্টা করেছি কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, সবধরনের চিকিৎসা তাকে দেয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ১২ এপ্রিল নদীর (সিংহী) শরীর থেকে রক্ত নিয়ে চট্টগ্রামের ভেটেরেনারী এন্ড সাইন্সসেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তারা রিপোর্টে তার শরীরে ভাইরাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান। সিংহী ‘নদী’র ময়নাতদন্ত শেষে পার্কের এক জায়গায় তাকে পুতে ফেলা হয়েছে।