সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৈলাশটিলার ৮ নম্বর কূপের খনন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে খনন কাজ করেছে বাপেক্স। এছাড়া কূপটি থেকে দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্রের মালিকানায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফসিএল)।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, গ্যাস উত্তোলন পাইপ নির্মাণ শেষ। আগামী ৩ মাসের মধ্যে কূপটি থেকে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
এসজিএফসিএল আরও জানিয়েছে, কৈলাশটিলার অবশিষ্ট উত্তোলনযোগ্য গ্যাস রয়েছে ১ হাজার ৯০০ বিলিয়ন ঘনফুট। ৮ নম্বর কূপে প্রাপ্ত হরাইজোন-৪ এর গ্যাস মজুদ ২৪-২৫ বিলিয়ন ঘনফুট, যা নতুন মজুদ হিসাবে যুক্ত হলো।
এছাড়া নতুন সংযোজিত গ্যাসের দাম এক হাজার ৬২০ কোটি টাকা (প্রতি ঘনমিটার ২২ দশমিক ৮৭ টাকা বিবেচনায়)। অন্যদিকে কূপটির খনন কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে: নসরুল হামিদ
বাপেক্সের বিজয়-১২ রিগ চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি খনন কাজ শুরু করে। তিন হাজার ৫০০ মিটার খনন করা হয়েছে। ৮ নম্বর কূপে প্রাপ্ত হরাইজোন-৪ এর নতুন গ্যাস স্তরের অবস্থান ৩ হাজার ৪৩৮ থেকে ৩ হাজার ৪৪৭ মিটার পর্যন্ত।
২৪ মে ডিএসটি (ড্রিল স্টেম টেস্ট) করা হয়, এতে কূপমুখে ফ্লোয়ং পেশার তিন হাজার ৩৮৩ পিএসআই (প্রেসার বর্গ ইঞ্চি) পাওয়া গেছে। এতে করে দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিলেটের কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্রের ৮ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন এসজিএফল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, গত বছরের জানুয়ারি থেকে কৈলাশটিলার ৮ নম্বর কুপে খনন কাজ শুরু করে বাপেক্স। কূপের তিন হাজার ৪৪০ থেকে ৫৫ হাজার ফুট গভীরতায় গ্যাস পাওয়া গেছে। এখন দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরীক্ষামূলকভাবে উত্তোলন হচ্ছে।
তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ উত্তোলন শুরুর আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা যায়, সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের উৎপাদনে থাকা কূপগুলো থেকে এখন প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। চলতি বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ করে তারা সেই উৎপাদনকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিয়ে যেতে চায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে সকল কাজ শেষ করতে পারলে শুধুমাত্র এই কোম্পানি থেকে প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে ২৫০ মিলিয়ন গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি সিলেট গ্যাসফিল্ডের আওতাধীন রশিদপুরের ২ নম্বর কূপে গ্যাসের নতুন স্তরের সন্ধান মেলে। যার পরিমাণ প্রায় ১৫৭ বিলিয়ন ঘনফুট।
তারও আগে গত ২৬ নভেম্বর দেশের সবচেয়ে পুরোনো গ্যাসক্ষেত্র হরিপুরের ১০ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান মেলে। খনন কাজ শেষে ওইদিন গ্যাস প্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)।
গতবছরের জুনে এই কূপ খনন কাজ শুরু হয়। ১৪৯ কোটি টাকায় সিলেট-১০ নম্বর কূপ খনন করে চীনের কোম্পানি সিনোপেক।
কূপটিতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ।
আর ২২ নভেম্বর সিলেটের কৈলাশটিলায় পরিত্যক্ত ২ নম্বর কুপ থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। দৈনিক ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৫৫ সালে। এরপর আবিষ্কার হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে এসজিএফএলের আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে।
সেগুলো- হরিপুর গ্যাসফিল্ড, রশীদপুর গ্যাসফিল্ড, ছাতক গ্যাসফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাসফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ড। এরমধ্যে ছাতক গ্যাসফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর মধ্যে ১৪টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
জানা যায়, জ্বালানি সংকট নিরসনে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে দেশের ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, খনন ও পুনঃখননের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
২০২৫ সালের মধ্যে এসব খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা। এতে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসজিএফএলের আওতাধীন ১৪টি কূপ খনন ও পুনঃখননের কাজ চলছে। সিলেটের ১৪ কূপের মধ্যে তিনটির খনন কাজ শেষে ২০২২ সাল থেকে উৎপাদন শুরু হয়। ২০২৩ সালে আরও একটি থেকে উৎপাদন শুরু হয়।
আরও পড়ুন: শনিবার যেসব এলাকায় ১৫ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে