মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সেন্টারটিতে তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন।
কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকা অন্য নারী ও পুলিশরা তাকে রক্ষা করেন।
খুলনা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ডাক্তারি পরীক্ষার পর মঙ্গলবার বিকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ওই নারীকে খুলনা পিটিআই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই নারী তাকে সেখান থেকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানালে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষ না হওয়ায় কেউ তাতে রাজি হননি। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় ঘটনা টের পেয়ে ওই সেন্টারে থাকা অন্য নারী ও পুলিশ সদস্যরা তাকে রক্ষা করেন।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ওই নারী রাতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মঙ্গলবার তার ১৪তম দিন ছিল। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪তম দিনে তার কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে। পরের দিন ১৫তম দিনে ফলাফল নেগেটিভ এলে তখন তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় কোয়ারেন্টিনে তরুণী ধর্ষণের দায়ে এএসআই গ্রেপ্তার
এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেন্টারটি পরিদর্শনে যান। এছাড়া ওই নারীকে তদারকির জন্য নারী পুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছে।
দু’জনের ডিএনএ টেস্ট হবে
খুলনায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে রয়েছেন। অপরদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের এএসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার দু’দিন ভুক্তভোগীর পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় আলামত মিলেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
খুলনা মেডিকেলে থাকার সময় ওই নারী ফোনে বলেন, ‘আমার দুটি সন্তান রয়েছে। এ ঘটনায় আমি সামাজিকভাবে হেয় হয়েছি। আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন অন্য কোনো নারীর সঙ্গে না হয়। আমি আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবু সাইদ বলেন, ‘এএসআই মোকলেছুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীর ডিএনএ টেস্টও করেছি, অভিযুক্ত পুলিশ সসস্যের ডিএনএ টেস্ট করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।’
এদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি সোনালী সেন বলেন, ‘ভুক্তভোগীর সব পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্টের জন্য চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করতে হবে। তাছাড়া তার শরীরের অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। তাকে আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। এএসআই মোকলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে, বিভাগীয় মামলা হবে শিগগিরই।’
এজহার দুর্বল
মেডিকেল পরীক্ষা ও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে খুলনায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারত ফেরত এক নারীকে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। তবে মামলার এজহারে দুর্বলতা থাকায় আসামি এএসআই মোকলেসুর রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. বিধান চন্দ্র ঘোষ বলেন, পরীক্ষা করে জানা যায় যে এটি যৌনমূলক মামলা। বিধি মোতাবেক গাইনি ওয়ার্ডের ডাক্তাররা তাকে ওসিসিতে পাঠান। তবে মামলার এজাহারে অসঙ্গতি স্পষ্ট। বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হলে এজাহারে ৯ এর ১ ধারা অনুযায়ী মামলাটি রজু করতে হবে। কিন্তু বাদীর খুলনা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে ৯ এর ৫ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনজীবীরা জানান, এতে করে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড না হয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
দুর্বল মামলা সাজানোর জন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ব্যর্থতাকে দুষছেন আইনজীবীরা।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, থানার ওসি কীভাবে এটি করেছে? তার তো ৯ এর ১ ধারা অনুযায়ী মামলাটি রজু করা উচিত ছিল।
এজাহারে এ ধরনের অসঙ্গতি আসামিকে বাঁচানোর চেষ্টা বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ৯ এর ৫ ধারায় এ মামলার চার্জশিট হয় তাহলে বাদী কোনো অবস্থায় ন্যায় বিচার পাবেন না, তখন আসামিপক্ষের জোরালো আবেদন থাকবে।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশরাফুল আলম জানান, এ ঘটনায় যে ধারা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা ঠিক আছে। ৯ এর ৫ তো পুলিশ হেফাজতে কেউ ধর্ষণ হয় সেইটা, সেটাই তো ধর্ষণই তো, আমার আসামি তো একজন, ধর্ষণের মামলাই তো নেয়া হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার
কোয়ারেন্টাইনে থাকা নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধর্ষকের শাস্তির দাবি
এদিকে, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, খুলনা জেলা’র সভাপতি কোহিনুর আক্তার কণা ও সাধারণ সম্পাদক বাসিরা সরদার পলি এক যুক্ত বিবৃতিতে গত ১৩ মে খুলনার পিটিআই-তে কোয়ারেন্টিাইনে থাকা ২২ বছরের নারীকে ধর্ষণের তীব্র নিন্দা ও ধর্ষকের শাস্তি দাবি করেন।
আরও পড়ুন: সাবেক প্রেমিকাকে হোটেলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা, ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
নেত্রীরা অবিলম্বে ধর্ষক এএসআই মোকলেসুর রহমানের কঠিন শাস্তির দাবি জানান এবং সারা দেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীসহ সমাজের সকল পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধতা ও প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
কেএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভারত ফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের জন্য নগরীর পিটিআই মোড়ে প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) মহিলা হোস্টেলে স্থাপিত করা হয় অস্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন। অবস্থানরতদের নিরাপত্তায় গত ১৩ মে দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন কেএমপির প্রসিকিউশন বিভাগে কর্মরত এএসআই মোকলেছুর রহমান।
উল্লেখ্য, ডিউটিতে থাকাকালীন এএসআই মোকলেছুর রহমান নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলায় কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানরত ওই গৃহবধূর (২২) কক্ষে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে তার মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে ১৫ মে রাত ১২টা ২০ মিনিটে আবার ভিকটিমের রুমে গিয়ে মেলামেশা করতে চাইলে ভিকটিম চিৎকার করেন। এসময় এএসআই মোকলেছুর দ্রুত নিচে চলে যান। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিক অনুসন্ধান করা হয়।
অনুসন্ধানকালে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পরিলক্ষিত হলে কেএমপি’র প্রসিকিউশন আদেশ নং-১৭৬, (১৬/০৫/২০২১) মূলে এএসআই (নি.)/৪১০৬ মোকলেছুর রহমান (বিপি নং-৭৭৯৭০৪৭২১০) কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অতপর এ ঘটনায় বাদীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে খুলনা সদর থানায় মামলা (নং-১৩, তাং-১৭/০৫/২০২১ (ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (৫) করা হয়। এ সংক্রান্তে আসামি এএসআই (নি.)/৪১০৬ মোকলেছুর রহমানকে (সাময়িক বরখাস্তকৃত) গ্রেপ্তার পূর্বক আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাকে (এএসআই) কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।