নিহতরা হলেন- নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের সামছুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা (৩৫) ও একই থানার বটতলা এলাকার বাবুল মিয়ার স্ত্রী করিমা বেগম (৩০)।
আহতরা হলেন- গোপালগঞ্জের জেলার কাজুলিয়া গ্রামের আকতার সরকারের ছেলে কামরুল সরকার, নেত্রকোনা জেলার কামলাকান্দা গ্রামের মোস্তফা আলীর ছেলে মানিক মিয়া, একই জেলার নিজামপুর গ্রামের শাহ নেওয়াজের ছেলে হারুন মিয়া।
এদিকে, দায়িত্বে অবহেলার কারণে গেইটম্যানকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও ট্রেনের যাত্রী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-রাজশাহী রেললাইনের কালিয়াকৈর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় লেবেলক্রসিংয়ে শনিবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। উত্তরবঙ্গের চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা নীলসাগর এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। অপরদিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বেগুনবাড়ি এলাকায় ইটখোলার শ্রমিক নামিয়ে রেখে দিয়ে নেত্রকোনার দিকে ফিরছিল। ফেরার পথে উপজেলার সোনাখালী এলাকায় ওই লেবেলক্রসিং গেইট বেরিয়ার না ফেলায় বাসটি রেললাইনের ওপর উঠে আটকে যায়। ট্রেন আসা টের পেয়ে বাসের চালক জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় ট্রেনের চালক ট্রেনটি থামানো চেষ্টা করলেও বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ট্রেনের সঙ্গে বাসটি আটকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে পাশের ভুঙ্গাবাড়ি এলাকায় রেললাইনের ওপর দুমড়ে-মুচড়ে পড়লে ট্রেনটি বন্ধ হয়।
খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসে আটকে যাওয়া চারজনকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বাসের ভেতরে থাকা করিমা বেগম নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মধ্যে মাসুদ রানাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই ট্রেনসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনের দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের যাত্রীরা। পরে ফায়ার সার্ভিস, থানা পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে উদ্ধার কর্মীরা রেললাইনের ওপর থেকে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নিলে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়দের ও ট্রেন থাকা যাত্রীদের অভিযোগ, ওই লেবেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বে থাকা লাইনম্যান রিপন হোসেন ঘুমিয়ে থাকায় গেইট বেরিয়ার নামানো হয়নি। যার কারণে ট্রেন আসার আগ মুহূর্তে বাসটি রেললাইনে উঠে পড়ে এবং ট্রেনের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটে। দায়িত্বরত গেইটম্যান রিপন ঘুম থেকে জেগে দুর্ঘটনাটি দেখে লেবেল ক্রসিং থেকে পালিয়ে যায়।
একই ধারণা করছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও রেলসংশ্লিষ্টরাও।
এদিকে, ট্রেন-বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার কারণে গেইটম্যান রিপনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
ওই ট্রেনের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গেইটে বেরিয়ার না ফেলায় বাসটি রেললাইনের ওপর উঠে আটকে যায়। পরে চালক হার্ডব্রেক করলেও বাসের সঙ্গে লেগে যায়। ট্রেনের সঙ্গে বাসটি আটকে প্রায় এক কিলোমিটার দুরে দুমড়েমুচড়ে পড়ে।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা কবীরুল আলম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার এবং আহতদের উদ্ধার করা হয়। পরে আটকে যাওয়া বাসটি সরিয়ে দিলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মান্নান জানান, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
জয়দেবপুর রেলস্টেশন মাস্টার শাজাহান মিয়া জানান, এ দুর্ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার কারণে গেইটম্যান রিপনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।