দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ৫৩ লটে ৪৮ হাজার ৮৭০ কেজি এসব কেমিক্যাল বন্দরের পি শেডে পড়েছিলো।
আগামী ৬ ডিসেম্বর এসব পণ্য সুনামগঞ্জের সুরমা এলাকায় লাফার্জ হোলসিমের সিমেন্ট কারখানায় জিওসাইকেল পদ্ধতিতে ধ্বংস করা হবে বলে বন্দর সুত্রে জানা গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না পাওয়ায় চট্টগ্রামে এ পণ্য ধ্বংস করতে না পেরে বুধবার তিনটি কাভার্ডভ্যানে করে সুনামগঞ্জে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) ফয়সাল বিন রহমান বলেন, ‘এ কেমিক্যালগুলো দীর্ঘ ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে বন্দরের পি-শেডে পড়েছিলো। এ কেমিক্যালগুলো নিলামে তোলা হয়েছিল। কিন্তু ক্রেতারা তা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তাই এসব কেমিক্যাল ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এসব চট্টগ্রামে ধ্বংস করার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর আপত্তি জানায়। এর প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরামর্শে এ কেমিক্যালগুলো সুনামগঞ্জের ছাতকে লাফার্জ হলসিম সিমেন্ট কোম্পানির একটি ডিও প্রকল্পে পাঠানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কেমিক্যালগুলোর মধ্যে রয়েছে বিপজ্জনক কঠিন পদার্থ, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ব্লাঙ্ককিট, ডাইথোনাইট এবং সালফক্সিলেট, হাইড্রোক্লোরাইড, নাইট্রো গ্লু সলিউশন, কস্টিক সোডা, ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান, বেভারেজ কনসেন্ট্রেটসহ বিভিন্ন রাসায়নিক। চট্টগ্রামে জনবহুল ও এখানে ডিও প্রকল্প না থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর কেমিক্যালগুলো সুনামগঞ্জে পাঠানোর পরামর্শ দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘ডিও প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী কেমিক্যালগুলো দুই হাজার ডিগ্রি উত্তপ্ত আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হবে। এ পণ্য ধ্বংস করার বিষয়ে একদম সূক্ষ্মভাবে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অপর এক কর্মকর্তা জানান, বন্দর শেডে পড়ে থাকা ৮৪ লট বিপজ্জনক পণ্য চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় এগুলোর প্রকৃত ওজন নির্ণয় করা কঠিন। আনুমানিক ১৫০ টন হতে পারে। কিছু কেমিক্যাল শনাক্ত করা যায়নি।
জানাগেছে, চলতি বছরের ৪ আগস্ট লেবাননের বৈরুতের বন্দরে সম্প্রতি সংঘটিত ভয়াবহ বিস্ফোরণের নেপথ্যে বন্দরে বিস্ফোরক মজুদের বিষয়টি সামনে চলে আসায় চট্টগ্রাম বন্দরে মজুদ বিপজ্জনক বিস্ফোরক ও ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্যাদি দ্রুত সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। পরে এ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সুপারিশে এসব বিপদজনকপণ্য চট্টগ্রামের কোনো জায়গায় মাটিচাপা দিয়ে ধ্বংস করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি চেয়ে গত ১৩ অক্টোবর আবেদন করে কাস্টমস হাউস। কিন্তু রাসায়নিক পণ্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে ধ্বংস করতে বলেছে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং চট্টগ্রামে এসব ক্যামিকেল ধ্বংস করা যাবেনা বলে জানায়। পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশে বিপজ্জনক পণ্যগুলো সুনামগঞ্জে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত হয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক নুরুল্লাহ নুরী বলেন, বন্দর শেড়ে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এসব রাসায়নিক পণ্য বিপদজনক হয়ে উঠেছে। এগুলো কোনোভাবেই খোলা আকাশে ধ্বংস বা মাটিতে পুঁতে ফেলা যাবে না।’
রাসায়নিক পণ্য দুই হাজার ডিগ্রি উত্তপ্ত আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে উল্লেখ করে আরও বলেন, ‘এই পদ্ধতিকে জিওসাইকেল বলা হয়। এটি আছে শুধু সুনামগঞ্জের লাফার্জ হোলসিমের একটি সিমেন্ট কারখানায়। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বন্দরের রাসায়নিক পণ্য ধ্বংসে সহায়তা করবে।’