স্মরণকালের ভয়াবহ লঞ্চ অগ্নিকাণ্ডে নিহত অজ্ঞাত পরিচয়ের ২৩ জনের লাশ শনিবার বেলা ১২ টায় বরগুনা সদর উপজেলার পোটকাখালী সরকারি গণকবরে দাফন করা হয়েছে। গণকবরে নেয়ার পরে সাতজনের লাশ শনাক্ত করে তাদের স্বজনরা। এসময় ২১ কবরে ২৩ জনকে সমাহিত করা হয়, দুটি কবরে মা ও সন্তানসহ চারজনকে দাফন করা হয়।
এর আগে এদিন বেলা ১১টায় স্থানীয় সার্কিট হাউস মাঠে ৩০টি লাশের একত্রে জানাজা হয়।
প্রসঙ্গত, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৩৫ জন ঘটনাস্থলে এবং তিন জন হাসপাতালে মারা যান।এরপর ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ একজন মারা যান।
আরও পড়ুন: লঞ্চের আগুনে আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক: সামন্ত লাল
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন বরগুনা জেলা প্রশাসনের দলের কাছে ৩৭টি লাশ হস্তান্তর করে। অন্যদিকে, বরগুনা জেলা প্রশাসন ঝালকাঠি ও বরিশালে চার জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। অবশিষ্ট ৩৩ লাশ শুক্রবার মধ্যরাতে বরগুনা নিয়ে আসা হয়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে লাশগুলো শনাক্ত করার জন্য রাখা হয়। এখানে তিনটি লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ৩০টি লাশের গোসল, কাপড় পরানো এবং কফিনে লাশ ভরাসহ স্বজনদের লাশ দেখানোর দায়িত্ব পালন করেন রেড ক্রিসেন্ট ও স্কাউট সদস্যরা। এ সব লাশ সমাহিত করার জন্য শহরতলীর পোটকা খালি সরকারি গণকবরস্থানে ৩০টি কবর তৈরির ব্যবস্থা করেন ৭নং ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আজিজুল হক স্বপন। দাফনকাজ শুরুর আগে আরও সাত লাশ শনাক্ত করে তাদের পরিবারের সদস্যরা। এসময় এখানে স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যায়। ২৩ লাশ শনাক্ত না হওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে তাদেরকে গণকবরে দাফন করা হয়েছে।
যে সকল লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে তাদের পরিবারকে দাফন-কাফনের জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: ৩০ জনের জানাযা সম্পন্ন
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির নলছিটির সুগন্ধা নদীর পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন। ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১৬ জনকে, আহত হয়েছে শতাধিক।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শুক্রবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলমকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, লঞ্চ দুর্ঘটনার পর পরই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তারা লাশ গ্রহণ, স্বজনদের কাছে হস্তান্তর ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। অজ্ঞাত লাশের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। নিখোঁজদের তালিকা তৈরি করার জন্য খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: ৩৩ মরদেহ বরগুনায় পৌঁছেছে