সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার বন্যার কারণে এসব এলাকার ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে।
অর্ধশতাধিক সেতু ও কালভার্টের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার ২২টি সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টাকার অংকে তিনশ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলা সদর ও অন্যান্য এলাকায় যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
এদিকে, সুনামগঞ্জ ছাতক সড়কের কাটাখালী এলাকায় প্রথম দফার বন্যায় ভাঙন দেখা দেয়। পরে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি প্রবল তোড়ে সড়কের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে ডুকে পড়েছে। পানির চাপে ব্যাপক আকারে সড়কে ভেঙে গেছে।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, ৩০টি সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩০টি গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার সড়ক অবকাঠামোতে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্গতরা জানান, উজানের ঢলের পানি কাটাখালী সড়কে ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবেশ করে দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে করে চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কামারগাঁও গ্রামের আব্দুল বাছিত জানান, প্রথম বন্যার চেয়ে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি বেশি হয়েছে। সে জন্য মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অপর ব্যক্তি আব্দুর রহমান বলেন, 'দ্বিতীয়বারের বন্যায় সড়ক কালভার্ট উপচে প্রবল বেগে আমাদের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।'
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম বলেন, পরপর দুই দফা বন্যায় জেলার সড়ক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের বন্যায় ৬০০ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে তা আরও কয়েকশো কিলোমিটার বাড়তে পারে।
তিনি জানান, অর্ধশতাধিক সেতু ও কালভার্টের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার ২২ সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ৩০টি ভিলেজ প্রটেকশন ওয়াল ভেঙে গেছে। টাকার অংকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আজ পর্যন্ত সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। তবে পানি সম্পূর্ণ নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে পানি নেমে গেলে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হবে।
প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র জানায়, জেলার ৮৪ ইউনিয়ন ও ৪ পৌরসভার ৩৩৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ১০৩টি পরিবারের ১২ হাজার ৬৭ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ১ লাখ ৮ হাজার ২২৯টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৮৬৫ মেট্রিক টন চাল, ৫১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ২ হাজার ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, সুরমা নদীর পানি এখন বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বর্তমানে হ্রাস পাচ্ছে। পানি হ্রাস পাওয়ার এই প্রবণতা আগামী ১৯ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এই সময় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে।
তবে উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয় অঞ্চলে পুনরায় সক্রিয় মৌসুমী বায়ু বিস্তারের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০-২১ জুলাই হতে পুনরায় জেলার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে বৃদ্ধির এই প্রবণতা ৪-৫ দিন স্থায়ী হতে পারে এবং সে সময়ে জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা নদীর পানি সমতল কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলের কোথাও কোথাও আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং কোথাও কোথাও নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।