‘আমি যখন মামলার আসামি হই, তখন আমার বয়স ছিল ৬২ বছর। মনে মনে ভাবতাম আসামি হয়েই হয়তো মরতে হবে। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া যে মৃত্যুর আগেই আমাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।’
মঙ্গলবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল হবিগঞ্জ-১ এর রায়ে খালাস পেয়ে আইনজীবীর কক্ষে বসে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কথাগুলো বলছিলেন প্রায় ৮৪ বছরের বৃদ্ধ দরছ মিয়া।
বিচারক সুদীপ্ত দাশ ধর্ষণ মামলার দায় থেকে তাকে বেকসুর খালাস দেন।
আরও পড়ুন: কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ-হত্যা: দিহানের জামিন আবেদন খারিজ
তিনি বলেন, ‘কবরে যাওযার বয়সে এসে ধর্ষণের মতো একটা খারাপ মামলায় জড়িয়ে পড়ায় ছেলে মেয়ে নাতি নাতনীদের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হতো।’
দরছ মিয়ার বাড়ি বাহুবলের পুটিজুরী ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রপুর গ্রামে। পেশায় কৃষক।
তাঁর পাঁচ ছেলে চার মেয়ে। আছে ১২ জন নাতি নাতনী।
১৯৯৯ সালে ১৮ জুলাই আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা হয় তিনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। মামলাটি করেন একই গ্রামের রাজা মিয়ার স্ত্রী লতিফা বিবি।
ওই মামলায় অপর দুই আসামি হলেন-দরছ মিয়ার খালাতো ভাই মঙ্গলকাপন গ্রামের বুলু মিয়া এবং একই গ্রামের জনৈক ইমান উল্লা (৩৫)।
মামলার ঘটনার সময় ১৯৩৭ সালে জন্ম নেয়া দরছ মিয়ার বয়স ছিল ৬২ বছর।
দরছ মিয়া বলেন, লতিফার স্বামী রাজা মিয়া তার এক কন্যাকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। বিয়ে মেনে না নেযায় রাজা মিয়া আমার বিরুদ্ধে এর আগে মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্থা করে। পরবর্তীতে তার কন্যা স্বামীর সংসার থেকে চলে আসে। রাজা মিয়া পেশায় একজন গাছচোর ও জুয়ারী ছিল।
তিনি বলেন, গ্রামের কতিপয় অসৎ লোকের সহযোগিতায় রাজা মিয়ার বর্তমান স্ত্রী লতিফা বিবি বাদী হয়ে ১৯৯৯ সালের ২১ জুলাই আদালতে ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইনে একটি ধর্ষণ মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ওই বছরের ১৮ জুলাই রাতে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে দরছ মিয়া, বুলু মিয়া ও ইমান আলী তাকে ধরে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন।
২০০১ সালের ২৪ জানুয়ারি পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। মামলায় ১২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। মামলা চলাবস্থায় গত দুই বছর আগে আসামি বুলু মিয়া মারা যান।
দরছ মিয়া জানান, প্রায় ২৪ বছর আইনী লড়াইয়ে ১০/১২ একর জমি বিক্রি করতে হয়েছে। আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বাদী লতিফা বিবি ভাল নেই। এখন স্বামী হত্যা মামলায় ছেলে জুয়েলকে নিয়ে নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাসাইলের সাবেক ইউএনও মঞ্জুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা