ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায় শহরের বেশকিছু রাস্তা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে শহরবাসী। শহরের অধিকাংশ খাল ও নালা দখল হয়ে যাওয়ায় এ দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার মুষলধারে বৃষ্টিতে শহরের কালিবাড়ি মোড় থেকে দক্ষিণ পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড, মেড্ডা পোদ্দার বাড়ি রোড, পৌর কলেজ রোড, মধ্য মেড্ডা, ফুলবাড়িয়া, হালদারপাড়া, অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, মুন্সেফপাড়া, কাউতলী স্টেডিয়াম এলাকা, পুরাতন জেল রোড, পাইকপাড়া রামকানাই হাই একাডেমির সামনের রাস্তা, আনন্দবাজারের রাস্তা, কাজিপাড়া, মৌড়াইলসহ শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার প্রধান প্রধান রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। পানি উঠে যায় রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন দোকানপাটে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়ে শহরবাসী।
আরও পড়ুন: আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে: বিএমডি
শহরবাসীর অভিযোগ, পৌরসভার ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করা এবং শহরের বিভিন্ন খাল প্রভাবশালীরা দখল করে ইমারতসহ দোকানপাট নির্মাণ করায় স্বাভাবিকভাবে পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এর সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার একটি সূত্র জানায়, কালিবাড়ি মোড় থেকে দক্ষিণ পৈরতলা সড়কের পানি কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে শহর খালে নামে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দক্ষিণ পৈরতলা বাসস্ট্যান্ডের পূর্বপাশের একটি খাল। যেটি কোনো স্থানে ১০ ফুট, আবার কোনো স্থানে ১৫ ফুট প্রশস্ত ছিল। খালটি গিয়ে মিশেছে শহর খালে।
কিন্তু এখন এই খালটি মাত্র দুই ফুটের ড্রেনে পরিণত হয়েছে। দেওয়াল দিয়ে খালের জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। এছাড়া শহরের কান্দিপাড়া মাদরাসা রোড মোড় ও মেড্ডায় দু’টি নালার অস্তিত্ব একেবারে মুছে ফেলা হয়েছে।
কামাল আহমেদ নামে একজন বাসিন্দা বলেন, কান্দিপাড়া মাদরাসা রোডে কয়েকটি নালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি বের হতে পারে না।
আরও পড়ুন: ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর
পৌর এলাকার মেড্ডা পোদ্দার বাড়ি রোডের ফার্নিচার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন, আগে শহরে পানি নিষ্কাশনের জন্য বড় বড় খাল ও নালা ছিল। বেশকিছু বড় খাল পৌরসভা ড্রেনে রূপান্তর করেছে। বেশকিছু খাল প্রভাবশালীরা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, পৌর শহরের ড্রেনগুলো পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত পরিষ্কার করেন না। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে আমার দোকানে পানি ঢুকে যায়।
এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, শহরের খাল ও ড্রেনগুলোর অধিকাংশই প্রভাবশালীরা দখল করে ফেলেছে। এছাড়া অবশিষ্ট ড্রেনগুলো পৌরসভার লোকজন নিয়মিত পরিষ্কার করেন না। ফলে বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
তিনি দ্রুত শহরের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কাউসার আহমেদ বলেন, পৌরসভায় জনবল সংকট রয়েছে। এছাড়া মানুষ নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য না ফেলে যেখানে-সেখানে ফেলছে। শহরের পশ্চিম অংশে ফোরলেন প্রকল্পের আওতায় ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে ফলে পানি সরছে না, ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। কাজ শেষ হলে এ সমস্যা থাকবে না ।
তিনি আরও বলেন, শহরের জেলা পরিষদ মার্কেট থেকে শহর খাল পর্যন্ত সড়কের পাশে পাইপের নালা নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ। ওই পাইপের নালার চেম্বারগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট দূরত্বে স্থাপিত। এতে পরিষ্কার করতে সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া শহরের বিভিন্ন ড্রেন সংস্কারেরও পরিকল্পনা রয়েছে পৌরসভার।