ভাইয়ের স্ত্রী শেহনীলা নাজ ও তার মা আছমা বেগম এতে জড়িত বলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় শুক্রবার লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
স্বজনরা জানান, মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের ভাড়া বাসা থেকে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে পুলিশ জাকারিয়া বিন হক শুভর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে তার প্রথম জানাজা শেষে বন্ধু-স্বজনরা মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির পথে রওনা দেন। তার বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঘনেশ্যাম(এমসি মোড়) গ্রামে।
শক্রবার রাত ১০টার দিকে কালীগঞ্জের তুষভান্ডার জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামের সামনে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
শুভর প্রয়াত বাবা আব্দুল হক কালীগঞ্জ সরকারি করিম উদ্দিন কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। শুভ দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়।
নিহতের বড় বোন নাজনীন বিনতে হক থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, বিয়ের পর আলাদা বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতো শুভ। এর পর থেকেই পরিবারের সাথে শুভকে যোগাযোগ করতো দিত না নাজ। কোনোভাবে যোগাযোগ করলেও তার স্ত্রী শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। ফলে শুভ সবসময় মানসিক যন্ত্রনায় ভুগতো।
তিনি আরও দাবি করেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নাজের মা শুভর পরিবারকে না জানিয়ে ‘আত্মহত্যার’ সংবাদ ফোনে জানান মামাকে। মৃত্যুর পর মা-মেয়ে মরদেহ দাফন, ময়নাতদন্ত বা কোনো কিছুতেই কোনো সহয়োগিতা করেননি এমনকি এসে খোঁজও নেননি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, শুভ ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে- তার স্ত্রী এমন দাবি করলেও ঘটনার পর সেখানে উপস্থিত তার স্বজনরা বেড রুমের মেঝেতে শুভর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।
জানা গেছে, জাকারিয়া বিন হক শুভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি বিষয়ে লেখাপড়া শেষে ওয়ালটনের মোবাইল সেক্টরে যোগদান করেন। তার সহপাঠী শেহনীলা নাজের সাথে গত বছরের ডিসেম্বরে বিয়ে হয় শুভর। বিয়ের পর থেকে রাজধানীর তাজমহল রোডের ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। তার স্ত্রী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শাশুড়ি আছমা বেগম রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল।
জাকারিয়া বিন হক শুভর বন্ধুরা জানান, স্কুল জীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখতেন শুভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে বিজয় একাত্তর হলে তিনি গড়ে তোলেন ডিবেটিং ক্লাব। এদিকে তার নিজ উপজেলা কালীগঞ্জের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শুভ ছিল প্রিয় একটি মুখ।
তার মৃত্যুর খবর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের এলাকায় এসে পৌঁছানোর সঙ্গে শোকের মাতাম চলছে। খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
মোহাম্মদপুর থানার এসআই ফারুকুল ইসলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফ্যানে ঝুলে যদি আত্মহত্যা করে থাকে, সেই লাশ মেঝেতে কেন? এমন প্রশ্নে উত্তরে তার স্ত্রী আমাকে জানান, ওড়না কেটে দেওয়াতে লাশটি পড়ে যায়।’