মঙ্গলবার আসামির অনুপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিচারক মো. আকতারুজ্জামান।
উপজেলার ধোপাকুড়া গ্রামের ওই ছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের দায়ে আশরাফুল ইসলামের (২০) বিরুদ্ধে এ আদেশের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাসের সাজার রায় ঘোষণা করে আদালত।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
সাজাপ্রাপ্ত আশরাফুল ওই গ্রামের আজগর আলীর ছেলে।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু জানান, ২০০৭ সালের ১৪ অক্টোবর ঈদের দিন বিকালে বোনের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরছিল ওই স্কুলছাত্রী (১২)। পথিমধ্যে একই এলাকার আশরাফুল তাকে ফুসলিয়ে স্থানীয় হামিদুলের ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে আশরাফুল ভুক্তভোগীকে পাশের ঝিনাইগাতী এলাকায় তার বোনের বাড়িতে নিয়ে দ্বিতীয়বার ধর্ষণের চেষ্টা করেন। সে সময় ওই স্কুলছাত্রী কান্নাকাটি শুরু করলে তাকে বোনের বাড়িতে রেখেই গা ঢাকা দেন আশরাফুল।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন
এ ঘটনায় স্কুলছাত্রী বাবা বাদী হয়ে পর দিন নালিতাবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলে পুলিশ আসামি আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তদন্ত কর্মকর্তা ২০০৭ সালের ৩০ নভেম্বর আশরাফুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
এদিকে, আদালতে বিচারকাজ চলাকালে আসামি আশরাফুল জামিন নিয়ে পালিয়ে যান।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন ওই ধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
এর আগে, দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের অধিবেশন না থাকায় গত ১৩ অক্টোবর ঘৃণ্য এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত আইনের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন) একটি সংশোধনী প্রস্তাব অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে আইনজীবী গ্রেপ্তার
বিশেষ করে সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল।
জাতিসংঘের উদ্বেগ
বাংলাদেশে নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সেই সাথে সংস্থাটি ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সমর্থন ও সুরক্ষা প্রদান এবং বিচারের ক্ষেত্রে দ্রুততা আনয়নে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার জরুরি সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: পাবনায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১
সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৭ অক্টোবর জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতিসংঘ বাংলাদেশে নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এগুলো গুরুতর অপরাধ এবং মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন।’