লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দরে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষের কারণে ৬ দিন থেকে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও বাংলাদেশি ট্রাক মিলে বুড়িমারী স্থলবন্দরে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ভারত থেকে মালামাল আসলেও তা খালাস হচ্ছে না। বুড়িমারী স্থলবন্দর অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টম্বর) দুপুরে বুড়িমারী স্থলবন্দরে শত শত ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থল বন্দরের ইয়ার্ড এবং মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
এর আগে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সমস্যা নিরসনে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি বিকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন।
আরও পড়ুন: জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশের পথে মহাসড়কের একাধিক স্থানে লোড-আনলোড শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রাখায় স্থলবন্দরের শেড, মাঠ ও সড়ক জুড়ে শত শত পণ্যবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে।
স্থলবন্দরে লোড-আনলোড শ্রমিকেরা সারাদিন ধরে দলে দলে বসে আছেন। শ্রমিকদের দাবি মজুরির টাকা সর্দারের মাধ্যমে দিলে নিবে না। সরাসরি লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার বা প্রতিনিধির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে, না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য লোড-আনলোড কাজ বন্ধ থাকবে।
এর আগে সঠিক মজুরি না দেওয়া, পারিশ্রমিকের কেটে নেওয়া টাকার হিসাব না দেওয়া, নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিক সংগঠনের কমিটি গঠন না করে স্বজনপ্রীতিসহ নানা বৈষম্যের অভিযোগে শ্রমিক সরদারদের বিচার ও পদত্যাগের দাবিতে একাধিকবার লোড-আনলোড বন্ধ রেখে মহাসড়ক অবরোধ ও ধর্মঘট করে শ্রমিকরা।
গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শ্রমিকদের মজুরির টাকা না দেওয়া ও সাধারণ শ্রমিকদেরকে কাজের সিরিয়াল দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ও সর্দার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার নিক্ষেপ করেন। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে শ্রমিকদের হামলায় দুই সাংবাদিকসহ ১৫ জন আহত হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলামকে প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে শ্রমিকরা।
এ ঘটনায় শ্রমিক অসন্তোষ ও স্থলবন্দরের কার্যক্রমে ব্যাঘাতের ঘটনায় শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ স্বাক্ষরিত একটি ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
এ কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান। অন্যান্য সদস্যরা হলেন- লালমনিরহাট সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) ফরহাদ ইমরুল কায়েস, পাটগ্রাম উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, পাটগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ, বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) গিয়াস উদ্দিন।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টা হতে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত সাধারণ শ্রমিকদের ১০ জনের প্রতিনিধি দল ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদকে নিয়ে বৈঠক করেন। শ্রমিকদের প্রতিনিধি দলের নের্তৃত্ব দেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী স্থলবন্দর শাখার সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন।
বৈঠক সূত্র জানা গেছে, সমস্যা নিরসনে সর্দার কুজিওমিনের পক্ষ, ঠিকাদার ও শ্রমিকপক্ষের মাধ্যমে লোড-আনলোড, মজুরি পরিশোধের কাজ করার প্রস্তাব করা হলে শ্রমিকেরা এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ফলে কোনো প্রকার সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
শ্রমিক লীগ বুড়িমারী স্থলবন্দর শাখার সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বুড়িমারী স্থলবন্দরের সকল শ্রমিক ট্রাক থেকে পণ্য খালাস করবে না। এই ঘটনায় বৈঠক হলেও তা এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রবিবার সন্ধ্যায় গঠিত কমিটি ও শ্রমিক ও সর্দার প্রতিনিধিদেরকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এ তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান স্যার নোট করে নিয়ে গেছেন, এখন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফাইনাল সিদ্ধান্ত আসলে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
বুড়িমারী বন্দরের কাস্টমসের ডিপুটি কমিশনার আব্দুল আলিম বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গতকাল ভারত থেকে ১১টি ট্রাক বাংলাদেশের প্রবেশ করলেও আজকে একটিও ট্রাক প্রবেশ করেনি। বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক ও ইউএনও মহোদয়গণ কাজ করছেন। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ