সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। জেলার গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পানি কমতে শুরু করেছে।
পানি যত কমছে, ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ততই ভেসে উঠছে। নষ্ট হয়ে গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ নথি, যানবাহন, দোকানের মালামাল এবং ভেঙে গেছে সড়ক, ভেসে গেছে মাছের ঘের।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা আশা করছেন, নতুন করে বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকালে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার (৩১ মে) বিকাল দিকে তা কমে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: বিজিবির উদ্ধারকাজ ও খাবার বিতরণ
এখনও প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। যেসব এলাকার উচুঁ স্থান ও ঘর-বাড়ি থেকে পানি কমে গেলেও জলাবদ্ধতার কারণে বানের কাদা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা ঘর-বাড়ি ভেঙে পড়ছে এবং পানিবাহিত রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অপরদিকে কোম্পানীগঞ্জে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও এখনো ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার বিকাল থেকে উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভেসে উঠছে।
পাউবোর তথ্যমতে, উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ৬৩ মেট্রিকটন জিআর চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৫ কেজি ওজনের ২০০টি বিশেষ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়াও এই উপজেলায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১০০ মেট্রিকটন জিআর চাল ও ৫ হাজারপ্যাকেট শুকনো খাবার ১০ লাখ টাকা জিআর ক্যাশ, শিশু খাদ্য ক্রয়ের নিমিত্ত ৫ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্য ক্রয়ের নিমিত্ত ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা চেয়ে পত্র দিয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেট জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জামাল খান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ সমন্বয়ে গঠিত টিম উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, সড়ক, ব্রিজ-কালভার্টের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি, গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কাজ করছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, কোম্পানীগঞ্জ পাহাড়ি ঢলের পানি শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ১ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি খারাপ হলে মানুষকে উদ্ধার ও সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক টিমসহ উপজেলা প্রশাসনের একাধিক টিম প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের অনতিবিলম্বে নদী ও খালের পার্শ্ববর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থানের বাঁধ, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট ও সেতুগুলোকে সংস্কার করে যানবাহন লাচল উপযোগী করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।