সরকারি মালিকানার ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) ১২টি চা-বাগানসহ সকল চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি-রেশন অবিলম্বে পরিশোধ ও পিএফ চাঁদা জমা দেওয়ার দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেবাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বেলা ২টায় নগরীর ক্বিন ব্রিজ প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে মিছিল শুরু করে জিন্দাবাজার প্রদক্ষিণ করে তারা।
এসময় মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৩ মাস যাবত সরকারি মালিকানার এনটিসির ১২টি বাগানের প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক মজুরি-রেশন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। শ্রমিকরা অন্তবর্তী সরকারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে দাবি জানিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে গত ২৬ দিন যাবত লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন। কিন্ত তাতেও সরকারের টনক নড়ছে না।
তারা বলেন, মজুরি-রেশন না পেয়ে এনটিসির বাগানসমূহের প্রায় ৪০-৫০ হাজার মানুষ আজ অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির সময়ে দৈনিক মাত্র ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে এমনিতেই চা-শ্রমিকদের অর্ধাহার-অনাহারে কাটাতে হয়। তার উপর যদি শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে শ্রমিকদের কি অবস্থায় পড়তে হয় তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। শুধু এনটিসির বাগানই নয়, সমগ্র চা-শিল্পের শ্রমিকরা আজ কঠিন সময় পার করছেন।
বক্তারা আরও বলেন, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর চা-শ্রমিকদের মজুরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হতে চললেও ২০২৩-২৪ সালের মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি। এব্যাপারে অতীতের ন্যায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বিকার। অনেক বাগানে চা-শ্রমিকদের মজুরি প্রায়ই আটকে রাখা হচ্ছে।
এনটিসি, দেউন্দি টি কোম্পানি, সিলেট টি কোম্পানিসহ তারাপুর, ফুলতলা, ইমাম-বাওয়ানী, মোমিনছড়াসহ ব্যক্তিমালিকাধীন চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন ঠিক মতো পরিশোধ করা হচ্ছে না। আবার মাসের পর মাস চা-শ্রমিকদের পিএফ চাঁদাও ফান্ড অফিসে জমা দেওয়া হচ্ছে না। মজুরি পরিশোধের ক্ষেত্রে চা-শ্রমিকরা নানা রকম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আইন অনুযায়ী ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের মজুরি স্থায়ী শ্রমিকের সমান হলেও অনেক বাগানে কম মজুরি দেওয়া হচ্ছে এবং উৎসব বোনাস সকল শ্রমিকের সমান হলেও হাজিরার উপর নির্ভর করে বোনাস দিয়ে শ্রমিকদের ঠকানো হচ্ছে। চা-শ্রমিকদের এই সকল বঞ্চনার ব্যাপারে মালিক-সরকার ও দালাল নেতারা নির্বিকার। তাই চা-শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার এই কঠিন সময়ে অতীতের শিক্ষা নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলে দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হতে হবে।
সিলেট জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরা, নারী চা-শ্রমিক লক্ষ্মী রানী বাক্তি, হোটেল শ্রমিকনেতা সাদেক মিয়া, স’মিল শ্রমিকনেতা রুহুল আমিন, জাতীয় ছাত্রদল সিলেট জেলা কমিটির আহবায়ক শুভ আজাদ শান্ত প্রমুখ।
সমাবেশ থেকে চা-শ্রমিক নেতারা সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও উৎপাদনে সক্রিয় থাকার প্রয়োজনে বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে ৬ সদস্যের পরিবারে ভরণ পোষণের খরচ হিসাব করে ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য নিন্মতম মজুরি নির্ধারণ এবং একটি পরিবারের সাপ্তাহিক প্রয়োজনের অনুপাতে চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, সাবান, চা-পাতাসহ পূর্ণ রেশন প্রদান, ভূমির অধিকার প্রদান, চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটি প্রদানে বৈষম্যসহ শ্রম আইনের বৈষম্য নিরসন করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মজুরি ও উৎসব বোনাস প্রদানে সকল অনিয়ম বন্ধ করে শ্রমআইন মোতাবেক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক প্রদান, বকেয়া মজুরিসহ নিয়মিত সকল চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি-রেশন পরিশোধ, প্রতি মাসের পিএফ চাঁদা ফান্ড অফিসে জমা দেওয়া এবং ৯০ দিন কাজ করলেই সকল শ্রমিককে স্থায়ী করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান নেতারা।
আরও পড়ুন: বকেয়া বেতনের দাবিতে সিলেটে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি, উৎপাদনে ধস