সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত ইনচার্জ পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
বুধবার বেলা ১১টায় পিবিআই তদন্তকারী দল সিলেট কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাসের কাছে মামলার অভিযোগপত্রটি হস্তান্তর করে। অভিযোগপত্রে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ৫ পুলিশ ও আকবরকে পালাতে সহযোগিতাকারী কোম্পানীগঞ্জের আব্দুল্লা আল নোমান নামের এক যুবকসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
নোমানের বিরুদ্ধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসিটিভির হার্ডডিস্ক বদল করার অভিযোগ রয়েছে।
নিহত রায়হান আহমদ (৩৩) নগরীর জালালাবাদ থানাধীন নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান জানান, কোর্ট পুলিশ মামলাটি ভার্চুয়াল আদালতে উপস্থাপন করবেন।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও আব্দুল্লাহ আল নোমান। এদের মধ্যে নোমান ছাড়া সবাই কারাগারে রয়েছেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী জানান, পিবিআই দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে আপাতত কোনো অসংঙ্গতি চোখে পড়েনি। তবে অভিযোগপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র তোলার পর বিস্তারিত জানা যাবে। এরপর অভিযোগপত্র নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
গত বছরের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে টাকা আদায়ের লক্ষ্যে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে বর্বর নির্যাতন চালানো হয় রায়হান আহমদের ওপর। এসআই আকবরের নেতৃত্বে তার হাতের নখ তুলে নেয়া হয়। সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এমন বর্বর নির্যাতনে মারা যান রায়হান। মৃত্যুর পর ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চালায় বন্দর ফাঁড়ির পুলিশ। রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও আদালতে আসামিদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে টাকার জন্য ফাঁড়িতে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি উঠে আসে। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে হেফাজতে মৃত্যু নিরোধ আইনে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার পর পুলিশ, লাইনে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় পালিয়ে যান বন্দরবাজার ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। তিনি ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ ওঠে।
নানা সমালোচনা ও তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে আকবরকে গ্রেপ্তার করে সিলেট জেলা পুলিশ। ভারতে পালানোর সময় সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে আটক করে বলে সেসময় জানিয়েছিলেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
তবে আরেকটি সূত্র জানায়, ভারতের সীমান্তের ভেতরে স্থানীয় খাসিয়ারা আকবরকে আটক করে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে এসে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আকবরকে কানাইঘাট সীমান্তের ওপারে ভারতের একটি খাসিয়া পল্লীতে আটকের একটি ভিডিও ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে।
আকবরকে গ্রেপ্তারের পরদিন ১০ নভেম্বর তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। এরআগে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার অন্য পুলিশ সদস্যদেরও রিমান্ডে নেয়া হয়। তবে রিমান্ড শেষে তারা কেউই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।