সৌদি আরবের আল নাজদ অঞ্চলের আফিফ শহরে কাজে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় সবুজ, সাব্বির ও রিফাত নামে তিনজন বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বাংলাদেশি সময় দুপুর ১২টা ও সৌদি সময় আনুমানিক সকাল ৯টার দিকে আফিফ থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পশ্চিম বিশকাটালি গ্রামের জামাল চৌকিদারের ছেলে সবুজ চৌকিদার, পার্শ্ববর্তী হাইমচর উপজেলার আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙা গ্রামের সৈয়াল বাড়ির মো. ইসমাইল ছৈয়ালের ছেলে মো. সাব্বির এবং উত্তর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মো. রিফাত।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১
এদের মধ্যে সবুজ গাড়ির চালক ছিলেন।
শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে নিহত তিন শ্রমিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের মাতম। ঈদুল আজহার সময়ে এমন দুর্ঘটনা পরিবার তিনটিতে হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
রিফাতের স্বজনরা জানায়, কমলাপুর গ্রামের রিফাত মাত্র তিন বছর আগে গিয়েছেন ওই দেশে। নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
তার বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৩/৪ দিন আগেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার আবদার ছিল ছেলে যেন বাড়িতে এসে ঈদ করে। কিন্তু তা আর হলো না।
ওদিকে নিহত সাব্বিরের বাবা ইসমাইল ছৈয়াল ও মা ফাতেমা বেগমের একটাই দাবি তাদের সন্তানকে দেশে আনার জন্য সরকারিভাবে যেন সহযোগিতা করা হয়।
সাব্বিরের মা ফাতেমা বেগম ছেলের শোকে কথাও বলতে পারছে না। অনেকটা বাকরুদ্ধ। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিয়েও মাকে বোঝাতে পারছেন না। কিছু সময় পরপর ছেলের নাম নিয়ে কেঁদে উঠেন।
সাব্বিরের ছোট বোন স্নেহা বলেন, ভাই আমাকে ফোনে অনেক স্বপ্ন দেখাতেন। আমাকে নিয়ে ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। দেশে আসলে কী করবেন। গত কয়েকদিন আগে কথা হলে আমি দেশে আসার জন্য বলি। কিন্তু ভাইয়ের আর আসা হলো না। বড় ভাইও সৌদিতে থাকেন।
সাব্বির আর রিফাতকে সৌদিতে কাজের জন্য নেন সবুজ চৌকিদার। তিনি তাদের নিয়ে আফিফ শহর ও আশপাশের এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ করতেন। নিজেদের গাড়িতে তারা কাজে আসা-যাওয়া করতেন। দুর্ঘটনার সময় সবুজ গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে জানান তার বাবা জামাল চৌকিদার।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১
জামাল চৌকিদার বলেন, তার ছেলে সবুজ প্রায় ১৮ বছর ধরে সৌদিতে থাকেন। দুই সপ্তাহ আগে দেশ থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের সৌদিতে নিয়ে গেছেন। তারা এখন সৌদি আছেন।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় ৪টায় সবুজসহ তিনজনের দুর্ঘটনার খবর পান। রাত ১০টায় সেখানে অবস্থানরত স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারেন দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে সবুজের মৃত্যুতে তার মা ও স্বজনরা শোকাহত।
এই তিন পরিবারের আকুল আহ্বান হচ্ছে- তাদের সন্তানদের লাশ আনার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যাতে সহযোগিতা করে।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বলেন, সৌদিতে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি। তবে আমাদের জানালে, তাদের জন্য যেসব করণীয় আছে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩